Logo

সারাদেশ

অবশেষে যমুনা রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

Icon

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৩

অবশেষে যমুনা রেলসেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেলসেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে সেতুর পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রেলসেতুটি উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। 

এর ফলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। এদিন মাত্র সাড়ে তিন মিনিটেই রেলসেতু অতিক্রম করে স্পেশাল ট্র্রেনটি। এর আগে ৬ কোচের (বগির) এই স্পেশাল ট্রেন প্রস্তুতের পর সজ্জিত করা হয়। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি, জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ইতো তেরুয়ুকি প্রমুখ। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরিফা হক, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান প্রমুখ। 

এরপর সেতুর পূর্ব ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জ পশ্চিম প্রান্তের সয়দাবাদ রেলস্টেশন পর্যন্ত উদ্বোধনী ট্রেনে অতিথি ও সংশ্লিষ্টরা যমুনা রেল সেতু অতিক্রম কবরে। পরে সয়দাবাদ রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। সেখানে সংবাদ সম্মেলন শেষে  ট্রেনটি ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন পূর্ব প্রান্তে ফিরে আসবে। 

৫০টি পিলার আর ৪৯টি স্প্যানের ওপর অত্যাধুনিক স্টিল প্রযুক্তির অবকাঠামোতে নির্মিত ডাবল লেনের সেতুটি জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অগ্রযাত্রার কথা। ৪.৮ কিলোমিটার ডাবল লাইন ডুয়েলগেজ সেতুটি দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে ঢাকার সঙ্গে রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছে।

জানা গেছে, সেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। তবে উদ্বোধন উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে সেতু নিয়ে ৯০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে। এতে সময় লাগবে সাড়ে ৩ মিনিট। এর আগে যমুনা সেতু দিয়ে ট্রেন পাড়ি দিতে ২০ মিনিট সময় লাগত। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ শুরু হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। গতি কমের কারণে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে থাকে শিডিউল বিপর্যয়। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। 

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা করা হয়। যার মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ দেশীয় অর্থয়ান এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ঋণ দিয়েছে। 

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনের রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই এবং টিওএ করপোরেশন এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজে সেতুর নির্মাণকাজ করেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্বে আসার পর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুটির নাম পরিবর্তন করে যমুনা সেতু নামকরণ করা হয়।  

সূত্র জানায়, এ সেতুটি চালু হওয়ায় এখন উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ও রেলওয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অভ্যন্তরীণ রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি ট্রান্স এশিয়ান রেলপথে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করবে বাংলাদেশ। 

একই সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হবে। এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি যমুনা সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। একইসঙ্গে উত্তরাঞ্চল থেকে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজ হবে। যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে। আগে যমুনা সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করলেও নতুন সেতু দিয়ে ৮৮টি ট্রেন চলাচলের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেন চলাচলের আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

  • রেজাউল করিম/এমজে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

যমুনা সেতু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর