সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে মৃত্যুমিছিল, এক বছরে ৩৫ প্রাণহানি
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৪:০১

ভয়াবহ এক মৃত্যুপুরিতে পরিণত হচ্ছে সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়ক। গত এক বছরে সড়কটিতে ঝরেছে ৩৫ প্রাণ। একই সময়ে আহত হয়েছেন ২৭ জন। এসব দুর্ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে এখনো সড়কটিতে দুর্ঘটনা প্রবণতা কমে নি।
-দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বেপরোয়া গতি
-মহাসড়কে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক বেশি
তামাবিল হাইয়ে পুলিশ বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছে, গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে বটেশ্বর বাজার সংলগ্ন জৈন্তাপুর উপজেলার সীমানা গেইট এলাকায় মোট ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৫ জন। আর আহত হয়েছেন ২৭ জন।
এর মধ্যে গত বছরের মার্চে ৫টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১১ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হন। একই বছরের এপ্রিল, জুন, জুলাই, আগস্ট, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে ২টি করে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং ৯ জন আহত হন। এ ছাড়া মে মাসে ৩টি দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় ২ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হন। সবশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৫টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৫জন এবং ফেব্রুয়ারিতে ৪জন নিহত হন। একই সময়ে আহত হন আরও ১জন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত লেগুনার সংখ্যা ২ হাজার ৩১০। এগুলোর মধ্যে বেশিভাগেরই কাগজপত্র এবং ফিটনেস ঠিক নেই।
দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বেপরোয়া গতিকে দায়ী করছেন তারা। তামাবিল হাইয়ে থানা, সিলেট রিজিয়নের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন, গত এক বছরে ২৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৫ জন নিহত এবং ২৭জন আহত হয়েছেন। এসব ঘটনার প্রধান কারণ ‘বেপরোয়া গতি’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মহাসড়কটির অনেকাংশে ভাঙা রয়েছে। ফলে গাড়িগুলো অনেকসময় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে দিনেরবেলা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চলাচলের কারণে এসব দুর্ঘটনা বাড়ছে। আমরা গাড়িগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে কাজ করছি। পাশাপাশি দ্রুত গতির জন্য মামলাও করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, জেলায় নিবন্ধিত লেগুনার সংখ্যা ২ হাজার ৩১০। এগুলোর মধ্যে বেশিভাগেরই কাগজপত্র এবং ফিটনেস ঠিক নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব লেগুনার বেশিভাগ চালক শিশু ও কিশোর বয়সীরা। এ ছাড়া জেলায় পিকআপ ভ্যানের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। এগুলোর মধ্যে কিছুসংখ্যকের ফিটনেস সনদ নেই। মহাসড়কে এসব যানবাহনের কারণেই দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে স্থানীয় অনেকের দাবি, চোরাচালান পণ্যবাহী যানবাহনের কারণে মরণফাঁদে পরিণত সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ভারত সীমান্ত থেকে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে চোরাই পণ্য। চোরাচালানিরা ভারতীয় চিনি, চা-পাতা, পেঁয়াজ, প্রসাধনী সামগ্রী, গরু-মহিষ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক দিয়ে শহরে নিয়ে আসেন। এসব চোরাই পণ্য নিরাপদে আনতে অবৈধ পণ্যবাহী গাড়িগুলো বেপরোয়া গতিতে চলে। এ কারণে দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলছে।
তবে জৈন্তাপুর উপজেলা ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এসইউ সাদ্দাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যারা চোলাচালান পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে দায়ী করছেন, তারা হিংসুক। চোরাচালান কোত্থেকে হয়? কিছু গাড়ি স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য বহন করে, সেগুলো রাতে। আর দুর্ঘটনা তো বেশিভাগ দিনেই ঘটছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মূলত সড়কের বেহাল দশার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। বেশিভাগ তরুণ বাইক এক্সিডেন্ট করছে। তরুণদের হাতে বাইক না দেওয়া ভালো।’
এটিআর/