ফুল তুলে মাঠেই ফেলে দেওয়া হচ্ছে
উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না ফুল চাষিরা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১৪:৩১

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় গাঁদা ফুলের চাষিরা বাজারে দাম না পেয়ে মাঠের পর মাঠ ফুল তুলে ফেলে দিচ্ছেন। ফুলের চাহিদা ও দাম না থাকায় চাষীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এতে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জেলার অন্যান্য উপজেলার মাঠেও একই চিত্র দেখা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৪৫ হেক্টর জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ হয়েছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন মাঠে কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে কিছুদিন ভালো দাম পাওয়া গেলেও বর্তমানে ফুলের দাম তলানিতে ঠেকেছে। চাষিরা তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না।
ঝিনাইদহ জেলা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফুল উৎপাদনকারী অঞ্চল। জেলার কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জ, মহেশপুর ও সদর উপজেলায় ৪০০ হেক্টরের বেশি জমিতে গাঁদা, গোলাপ, জারবেরাসহ বিভিন্ন রকমের ফুলের চাষ হয়। এর মধ্যে ২৫০ হেক্টরের বেশি জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ হয়। রবি ও খরিপ দুটি মৌসুমেই এখানে গাঁদা ফুলের চাষ করা হয়।
সরেজমিনে কোটচাঁদপুরের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুলে ভরা মাঠ। কিন্তু দাম না পেয়ে চাষিরা ফুল তুলে মাঠেই ফেলে দিচ্ছেন। ফুলের গাছ বাঁচাতে তারা এ কাজ করছেন।
কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের নারায়ণ বাড়িয়া গ্রামের ফুল চাষি মিলন হোসেন জানান, তিনি গত ১২-১৫ বছর ধরে গাঁদা ফুলের চাষ করছেন। এ বছর ২ বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। চাষ করতে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু ফুলের দাম না পাওয়ায় তার খরচ উঠানোর কোনো লক্ষণ নেই।
তিনি বলেন, ‘সারা মৌসুমে যদি আমরা ফুল বিক্রি করতে পারতাম, তাহলে ২-৩ লাখ টাকা বেচা সম্ভব হতো। ভালো লাভ হতো।’
কোটচাঁদপুরের একরা গ্রামের কৃষক আনছার রহমান দেড় বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলের চাষ করেছেন। তিনি জানান, ফুল তোলা, মালা গাঁথা ও পরিবহন খরচ মিলে প্রতি ঝুপ্পা ফুলের খরচ পড়ে ২৭ টাকা। কিন্তু এমন দামেও ফুল বিক্রি হচ্ছে না। অথচ ভালো দাম পেলে প্রতি ঝুপ্পা ফুল ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।
ফুলচাষি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা জমি থেকে ফুল তুলে ঝুপ্পা গাঁথি। এরপর তা ঢাকাগামী বাসে তুলে দিতাম শাহবাগ মার্কেটের জন্য। তারা বিক্রি করে বিকাশ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এবার বড় ধরনের লোকসান হয়েছে।’
গান্না ফুল বাজার প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম দাউদ হোসেন জানান, মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় ফুলের মান কিছুটা কমে যায়। এ ছাড়া রমজান শুরু হওয়ায় তেমন অনুষ্ঠান না থাকায় ফুলের চাহিদা কমে গেছে।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, ‘এ উপজেলার সব ইউনিয়নে কম-বেশি ফুলের চাষ হয়ে থাকে। ফুলের প্রকৃত মৌসুম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস। ওই সময় ফুল উঠলে চাষিরা দাম ভালো পায়। এখন বাজারে ফুলের চাহিদা কম থাকায় দামও কম।’
ঝিনাইদহ জেলা ফুলচাষি সমিতির সভাপতি জামির হোসেন বলেন, ‘সিজন জুড়ে জেলায় গাঁদা ফুলসহ অন্যান্য ফুল মিলে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। উৎসবগুলোতে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা ও গোলাপ ফুল বেশি বিক্রয় হয়। কিন্তু এবার চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুর-গান্না বাজার ফুল বিপণন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার নতুন করে অনেক চাষি ফুল চাষ করছেন। ঝিনাইদহে যদি ফুল সংরক্ষণ কেন্দ্র (কোল্ড স্টোরেজ) থাকত, তাহলে দাম কমের সময় সেখানে ফুল রাখার পর দাম বাড়লে বিক্রি করতে পারতেন।’
- বুরহান উদ্দিন/এমজে