টাঙ্গাইল
৬ শতাংশ ঘুষ দিলেই মিলছে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা

বাংলাদেশের প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১৯:৪৯

আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রস্থতায় উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতে টাঙ্গাইল-নাগরপুর মহাসড়ক উন্নয়নের করছে সরকার। এই সড়কের ভূমি অধিগ্রহণকৃত টাকা উঠাতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। অভিযোগ উঠেছে, টাঙ্গাইল পৌরসভা এলাকার দালাল ইসমাইল হোসেনকে ৬ শতাংশ টাকা ঘুষ না দিলে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা মিলছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে ইসমাইল ঘুষ বাণিজ্য করছে। এছাড়াও ঘুষ নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের সহায়তায় অধিগ্রহণকৃত ভবনের বর্তমান দামের চেয়ে অনেক দাম বেশি নির্ধারণ করেছে। সেই অতিরিক্ত টাকাও দালালসহ কর্মকর্তাদের মাঝে ভাগাভাগি হচ্ছে।
তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি দালাল ইসমাইল হোসেন কিংবা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মকর্তারা অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, টাঙ্গাইল শহরের যানজট এড়াতে ও সময় বাঁচাতে নগরজলফৈ বাইপাস হতে নাগরপুর সড়কে বাইপাস সড়ক করছে সড়ক বিভাগ। এই সড়ক করতে অনেকের বাড়িসহ ঘর, কারো জমি, আবার কারো জমিসহ গাছপালা পড়েছে। এই ভূমি অধিগ্রহণের টাকা তুলতে হলে বছরের পর বছর ঘুরতে হচ্ছে। তবে বেড়াবুচনা এলাকার দালাল ইসমাইলের সাথে ৬ শতাংশ ঘুষ লেনদেন করলে এই টাকা তাৎক্ষণিক মিলছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অধিগ্রহণ কার্যালয়ের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে ইসমাইল হোসেন এই ঘুষ বাণিজ্য করছে। ইসমাইল বিভিন্নজনকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার নামে ঘুষ নিয়েছে। সেই টাকা না দেওয়ায় ইসমাইলের নামে একাধিক চেক ডিজঅনারের মামলা চলমান আছে।
স্থানীয়রা জানান, বেড়াবুচনা এলাকায় একাধিক ভবন কিনেছেন ইসমাইল হোসেন। এছাড়াও এলাসিন গ্রামে ৩ শতাংশ জমিসহ মনসুর হোসেনের দুই তলা ভবন, ৯ শতাংশ জমিসহ অভিযাত্রা নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিন শেড জায়গা কিনেছেন ইসমাইল হোসেন।
স্থানীয়দের আরও অভিযোগ, যাদের বহুতল ভবন অধিগ্রহণ হবে, তারা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ঘুষ দিয়ে বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়েও অধিক দাম নির্ধারণ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বই ব্যবসায়ী বলেন, আমি কোনো নির্ধারিত ঘুষ দিচ্ছি না। তবে মিষ্টি খাওয়ার জন্য একবারে কিছু টাকা ডিসি অফিসে জমা দিয়ে আমার চেক বুঝে নিয়েছি।
বেড়াবুচনা এলাকার ষাটোর্ধ্ব এক নারী বলেন, আমাদের বাড়ি যে দাম ধরেছে সেই দামে আশপাশের জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না, আর বাড়ি করব কীভাবে। সেই টাকাও পাচ্ছি না। ইসমাইল বিভিন্ন মাধ্যমে ৬ শতাংশ ঘুষ দাবি করছে। ঘুষের টাকা না দেওয়ায় আমাদের টাকা বুঝে পাচ্ছি না। এছাড়াও আমাদের অধিগ্রহণের টাকাও পাচ্ছি না।
কামাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, গণপূর্তের কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশ করে ভবনের একটি পিলারের মূল্য ৭২ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছেন। পরে সেই টাকা উত্তোলনও করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর যুবক বলেন, আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তির টাকা আমরা বুঝে নেব। তবে ঘুষের টাকা না দেওয়ায় সেই টাকাও পাচ্ছি না।
এলাসিনের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বিএনপি নেতা বলেন, ইসমাইল শুধু ৬ শতাংশ ঘুষই নিচ্ছেন না, এলাসিনসহ আশপাশের গ্রামে জমিসহ বিভিন্ন ভবনও কিনেছেন।
এ বিষয়ে মোবাইলে ফোনে ইসমাইল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন তিনি। তারপর আর ফোন রিসিভ করেননি।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুনাথ পালের সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অফিসে গেলে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রেজাউল করিম/ওএফ