নদীতে বাঁধা জীবন, আয়ে অনিশ্চয়তা
‘খাইতেই পারি না, ঈদের মার্কেট করমু কেমনে?’

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১৫:২৪

ঈদের আগের দিনগুলোতে সাধারণত সবাই ব্যস্ত থাকেন নতুন জামা-কাপড় কেনা, রান্নার প্রস্তুতি আর উৎসবের আনন্দে। কিন্তু পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নদীতীরবর্তী কালাইয়া ইউনিয়নের বগী তুলাতলা এলাকার মান্তা পল্লির মানুষদের জীবনে ঈদের কোনো আমেজ নেই। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত এই সম্প্রদায়ের কাছে ঈদে—নতুন জামা, ভালো খাবার বা উৎসবের কোনো স্থান নেই।
নদীতে বাঁধা জীবন, আয়ে অনিশ্চয়তা
তেঁতুলিয়া ও বগা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই মান্তা পল্লিতে ২০০টিরও বেশি পরিবার বাস করে। এদের বেশিরভাগই জেলে, যাদের জীবিকা নির্ভর করে নদীর মাছ ধরার ওপর। কিন্তু দিন দিন মাছ কমে যাওয়ায় আয়ও কমেছে। অনেকেই দাদনদারদের কাছে ঋণের বোঝা নিয়ে ধুঁকছেন। ঈদ এলেও তাদের রোজকার জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন আসে না—সকালে নদীতে মাছ ধরা, সামান্য আয়ে সংসার চালানো, আর অভাবের সঙ্গে লড়াই।
‘নৌকায় জীবন, নৌকায় মরণ’
মান্তা পল্লির বাসিন্দা ফাতেমা বেগম (৩০) বলেন, “নৌকায় ঘর, নৌকায় জীবন, নৌকায় মরণ। পারি নাই পোলাপানের পড়ালেখা করাইতে। খাইতেই পারি না, আবার ঈদের মার্কেট করমু কেমনে? দৈনিক ১৫০-২০০ টাকার বেশি আয় হয় না।”
৬০ বছর বয়সী জলিল সরদার বলেন, “নদীতে বাইচ করি, বাড়িঘর নাই। এখন তো বাইচও করতে পারি না—অবরোধ দিয়া জাল কাইড়া নেয়। মাইয়া-পোলার আংটি বন্ধক দিয়া জাল কিনি, সেটাও লইয়া যায়। সামনে ঈদ আসছে, কিন্তু মেয়ে-ছেলে নিয়ে ঈদ করার সামর্থ্য আমাদের নাই।”
তিনি আরও বলেন, ‘এত অভাবে চলতেছি আমরা, যেই অভাবের শুরু আছে শেষ নাই। সামনে ঈদ আইতেছে। আমরা মেয়ে-ছেলে লইয়া ঈদ করমু এমন কোনো ক্ষমতা আমাগো নাই। আমরা নদীতে নদীতে বাইচ করি, আমরা মান্তা। সরকার আমাগো চাল দেয় না, অন্যদের চাল দেয়। মেয়ে-ছেলে লইয়া খুব কষ্টে আছি আমরা।’
শিশুদের ঈদ : পুরানো জামায় আত্মসমর্পণ
১০ বছর বয়সী রাসেল বলে, “ঈদে নতুন জামা পাইব না। অবরোধের কারণে বাবা জাল বাইতে পারেন না। পুরানো জামা পরেই ঈদ করমু।”
১১ বছর বয়সী আমেনার কথায় বেদনা, “আমরা গরিব। সরকার কিছু দেয় না। পুরানো কাপড়েই ঈদ করব। আল্লায় আমাদের রোজগার বাড়াইয়া দেন নাই, তাই ভালো খাবারও জোটে না।”
আমেনা আরও বলেন, “আমার বাবা মা গরিব। আমাদের কোনো মজাটোজা কিন্না খাইতে পারি না। আল্লাহ আমাগো কোনো কামাই দেয় না যে আমরা কিন্না খামু।’
বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন নিবন্ধিত জেলেদের ভিজিএফ (ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং) কার্যক্রমের মাধ্যমে চাল সহায়তা দেওয়া হয়। ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ১০ কেজি চাল দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। মান্তা সম্প্রদায়ও যেন এই সহায়তা পায়, সেদিকে নজর রাখা হবে।”
- এমজে