‘তুই সাংবাদিক তো কী হইছিস, তোকে স্যান্ডেল খুলে পিটাব’

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৫:২২
-67e518d5e3a66.jpg)
‘তুই সাংবাদিক তো কী হইছিস, তোকে স্যান্ডেল খুলে পিটাব’! একজন নারী প্রধান শিক্ষকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে গাইবান্ধার সাংবাদিকতা ক্ষুব্ধ হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিক শেখ মামুন উর রশিদ সাহাবাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাতেমা আক্তার মিলির কাছে গেলে তিনি এ ধরনের আচরণ করেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর লাপাত্তা ছিলেন এই নারী প্রধান শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার পর আজ বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হাজির হন তিনি। তখন সাংবাদিকেরা তার কাছে গেলে তিনি রীতিমতো রেগে যান। কোন মন্তব্য না করে নানা বাজে শব্দচয়ন ও অশোভন আচরণ করেন। এক পর্যায়ে গালাগালসহ পায়ের স্যান্ডেল খুলে মারপিট করার হুমকি দেন তিনি।
এসময় দেশ রূপান্তর পত্রিকার সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধি শেখ মামুন উর রশিদ তার কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, `তুই সাংবাদিক তো কি হইছিস? তোকে স্যান্ডেল খুলে পিটাবো' এরপর তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে আরও অশোভন আচরণ করেন এবং কোনো মন্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
দুর্নীতির অভিযোগ ও ক্ষমতার অপব্যবহার ফাতেমা আক্তার মিলি গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের প্রয়াত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের শ্যালিকা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতির বোন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ক্ষমতার দাপটে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি বিদ্যালয়ে একক আধিপত্য কায়েম করেছেন এবং তার স্বামীর বড় ভাইকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগের নামে কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। এসব বিষয়ে একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার মেলেনি।
আওয়ামী লীগের পতনের পর ছিলেন লাপাত্তা। গত জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মিলি অনেকদিন ধরে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যখন তাকে নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে, তখন তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে হঠাৎ এসে তিনি নিজের স্বভাবসুলভ আচরণ বজায় রাখেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সাংবাদিকরা যখন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চান, তখন তিনি রীতিমতো রেগে গিয়ে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন এবং সাংবাদিককে শারীরিকভাবে আক্রমণ করার হুমকি দেন।
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া ও পরবর্তী পদক্ষেপ এ ঘটনায় সুন্দরগঞ্জের সাংবাদিক মহল ও সচেতন মহল তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। স্থানীয়রা মিলির অপসারণসহ তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাংবাদিক শেখ মামুন উর রশিদ বলেন, ‘একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। তিনি ক্ষমতার দাপটে যা খুশি তাই করছেন। আমরা চাই, তার দুর্নীতির তদন্ত হোক এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
অপরদিকে, বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে অনিয়ম-দুর্নীতির শাসন চলছে, যা শিক্ষার পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সুন্দরগঞ্জের মানুষ দ্রুত বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
আতিকুর রহমান/এমআই