নাগরিক পার্টির ইফতারের নামে বৈষম্যবিরোধী নেতার ‘চাঁদাবাজি’

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৬:১৯

খুলনার কয়রায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ব্যানারে ইফতার মাহফিলের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ও তার অনুসারী আব্দুর রউফ নামের এক স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ তুলেছেন একই সংগঠনের জেলা ও উপজেলার একাধিক নেতৃবৃন্দ।
জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করে চিঠি দিয়ে চাঁদা উত্তোলন করা হলেও অনুষ্ঠানে এনসিপি কিংবা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না।
অভিযোগকারী নেতাকর্মীরা জানান, গোলাম রব্বানী ও আব্দুর রউফের নেতৃত্বে ২৮ মার্চ কয়রা উপজেলা পরিষদের মাঠে বিশাল প্যান্ডেল করে কয়রা উপজেলা নাগরিক পার্টির ব্যানারে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. গোলাম রব্বানী। ইফতার মাহফিলে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাসহ প্রায় দুইশ মানুষ অংশ নেয়।
কয়রায় জাতীয় নাগরিক পার্টির উদ্যোগে ইফতার মাহাফিলের দাওয়াতপত্রে লেখা দেখা যায়, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কয়রার পক্ষ থেকে পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা ও বরকতপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে সামনে রেখে ইফতার মাহফিল। উক্ত ইফতার মাহফিলে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর কেন্দ্রিয় ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।’
দাওয়াতপত্রে কারো নাম না থাকলেও যোগাযোগের জন্য দুটি ফোন নম্বর লেখা রয়েছে। দুটি নম্বরের একটি উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. গোলাম রব্বানীর এবং অপর নম্বরটি আব্দুর রউফ নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের।
কয়রা উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপদেষ্টা শাহারুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান, আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আলতাফ মাহমুদ, সদস্যসচিব এস কে গালিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা জানান, কয়রায় এনসিপির কমিটি নেই, তবে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সংগঠিত করার চেষ্টা চলছে। ইফতার মাহফিল সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে কোনো আলোচনা না করেই গোলাম রব্বানী স্বেচ্ছাচারিতা করে এ আয়োজন করেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকার কথা বলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ও তার অনুসারী আব্দুর রউফ নামে একজন মিলে চাঁদাবাজির মাধ্যমে ইফতারের আয়োজন করে তাদের বিব্রত করেছেন।
তাদের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেওয়ায় তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নিজেকে জাহির করতে গিয়ে চাঁদাবাজি করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়রা উপজেলা মুখ্য সংগঠক ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্টের আগে ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে থেকেছি আর গোলাম রব্বানী একদিনও আন্দোলনে না গিয়ে ঘরে বসে আহ্বায়কের পদ পেয়েছেন। এ জন্য দলের জন্য তার কোনো মায়া নেই। ইফতার মাহফিলের বিষয়ে আমাদের সাথেও আলাপ করেনি। আমি নিজে ইফতারের টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেছে, এসব করতে গেলে একটুআধটু চাঁদাবাজি করতে হয়।’
এদিকে, খুলনা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক মহররম হোসেন মাহিমসহ কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের নিজেদের ফেসবুক আইডিতে এ ইফতার মাহফিলের সমালোচনা করে স্ট্যাটাস ও কমেন্ট করেছেন।
কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম রব্বানী ও তার সাথে সবসময় থাকে আব্দুর রউফ নামে একজন। তারা আমার কাছে এসে নাগরিক পার্টির ইফতারের কথা বললে আমি দশ হাজার টাকা দিয়েছি।’
কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘আমার কাছে গোলাম রব্বানী, আ. রউফসহ কয়েকজন এসে ইফতারের আয়োজনের জন্য ৫০ হাজার টাকা চায়। তারা বলেছিলেন আমি যেন ইফতারির জন্য পুরো মাংস কেনার টাকাটা দেই। তবে আমি পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এনসিপি কয়রার মূল সংগঠকরা এর সাথে নেই। এ জন্য আমি এড়িয়ে চলি।’
এ বিষয়ে কয়রা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘হিতাকাঙ্ক্ষী এবং নিজেদের অর্থে ইফতারের খরচ চালানো হয়েছে। আমাদের ভালো কাজগুলো দেখে দলের মধ্যে অনেকের হিংসা হয়। তারা আমাদের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যাচার করছেন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা শাখার সদস্যসচিব সাজেদুল ইসলাম বাপ্পী বলেন, ‘আমরা কখনো চাঁদাবাজিকে সমর্থন দেবো না। অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির খুলনার সংগঠক হামীম আহম্মেদ রাহাত বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটির সেটআপই নতুন দল এনসিপির কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। এখনো খুলনা জেলা কমিটি গঠন হয়নি, উপজেলা কমিটির তো প্রশ্নই আসে না। ইফতার ইস্যুতে কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া ঠিক নয়। কয়রায় নাগরিক পার্টির সাইনবোর্ড ও নাম ভাঙিয়ে এটা হয়েছে কিনা সেটা জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
টিআই/এমজে