নেত্রকোনায় নৌকাডুবি
‘ভাবতেই পারছি না আমরা বেঁচে আছি’

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৬:১৯
-67e91a9cbb011.jpg)
এক সাপ্তাহ আগে নেত্রকোনায় ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন বেহেলী ইউনিয়নের মদনাকান্দি গ্রামের ঝন্টু তালুকদার (৪০)। সাথে ছিলেন তার বাবা স্বর্ণকমল তালুকদার (৭২), স্ত্রী লিপি তালুকদার, ছেলে সাম্য তালুকদার (৫) ও সাত্ত্বিক তালুকদার (১ বছর ৭ মাস)।
ডাক্তার দেখিয়ে শনিবার (২৯ মার্চ) বাড়ি ফিরছিলেন ঝন্টু তালুকদারের পরিবারের সবাই। রাত নয়টায় উপজেলার বেহেলী ইউনিয়নের বৌলাই নদীর হারারকান্দী মোড়ে নৌকাডুবির সময় ঝন্টু তালুকদার ও তার স্ত্রী লিপি তালুকদার দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে পানিতে নামেন। দুর্ঘটনার স্থানে বুক পানি হওয়ায় হেঁটেই পাড়ে ওঠেন তারা।
শুধু ঝন্টু তালুকদারের পরিবার নয়, আহত এক ও নিহত চারজন ছাড়া নৌকায় থাকায় ৬০-৭০ জন যাত্রীর সকলে এভাবেই রক্ষা পান। প্রত্যক্ষদর্শী ও নৌকার যাত্রীরা বলছেন, অতিরিক্ত মালামাল বোঝাই থাকার কারণে নৌকার গতি কম ছিল। তেমুখীর মোড়ে পৌঁছে নৌকা ঘোরানোর সময় ডুবে যায়।
রোববার (৩০ মার্চ) সকালে ঝন্টু তালুকদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশুরা উঠানে খেলাধুলা করছে। প্রতিবেশীরা তাদের ঘিরে দুর্ঘটনার কথা আলোচনা করছেন।
কীভাবে দুর্ঘটনা ঘটেছে জানতে চাইলে ঝন্টু তালুকদার ও তার স্ত্রী লিপি তালুকদার বলেন, ‘আমরা জানালার পাশে ছিলাম। হঠাৎ দেখি পানিতে নৌকা ভরে যাচ্ছে। অন্ধকারে হাতড়িয়ে দুই ছেলেকে ধরে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আতঙ্কের মধ্যে পানিতে নামি। নেমে পায়ের নিচে মাটির স্পর্শ পেয়ে বুকে বল পাই। এরপর হেঁটে হেঁটে পাড়ে উঠি।’ তারা আরও বলেন, ‘ভাবতেই পারছি না আমরা বেঁচে আছি।’
নৌকার যাত্রী লিপটন তালুকদার বলেন, ‘নৌকার মধ্যে আমি ও আমার স্ত্রী ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ নৌকার মাঝির এক সহকারী আমাকে বলে, ‘এই লিপটন তাড়াতাড়ি উঠ, নৌকা ডুবে যাচ্ছে।’ উঠে বসতে বসতে নৌকা তলিয়ে যায়। জানালা দিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে বের হয়ে রক্ষা পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘৬০-৭০ জন যাত্রী ছাড়াও নৌকার মধ্যে টিন, সিমেন্ট, ধান, কাঠসহ নানান জিনিসপত্র বোঝাই ছিল।’
হারারকান্দায় বৌলাই নদীর তেমুখীতে নৌকাডুবি হয়েছে জানিয়ে বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য দেবাশীষ তালুকদার বলেন, ‘বৌলাই নদীর একটি শাখা শানবাড়ি ও অন্য দুইটি তাহিরপুর এবং মদনাকান্দি দুর্গাপুরের দিকে। এ অঞ্চলের গ্রামের মানুষজন সপ্তাহে একদিন শনিবার হাটবারে মধ্যনগর বাজারে যায়। এ সময় ব্যবসায়ী ও গ্রামের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে আনেন। মালামালের ওভারলোডের কারণে শনিবার রাতে এখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
নৌকাডুবির জায়গায় পানি বেশি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে ৭-৮ ফুট পানি রয়েছে। নৌকায় প্রচুর মালামাল ও ৬০-৭০ জন যাত্রী ছিলেন। ওভারলোডের কারণে তেমুখীতে নৌকা ঘোরাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার বিকাল পাঁচটায় মধ্যনগর থেকে নৌকাটি ছেড়ে আসে, দুর্ঘটনা ঘটেছে রাত সাড়ে ৮টায়। নৌকায় মালামাল বেশি থাকার কারণে নৌকার গতি কম ছিল, আসতে বেশি সময় লেগেছে।’
তিনি বলেন, ‘৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, একজন আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমরা এসে অন্যান্য যাত্রীদের উদ্ধার করেছি।’
আব্দুল হালিম/এমজে