-67e9797032f7a.jpg)
প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত অঞ্চল ‘চায়ের দেশ’ খ্যাত মৌলভীবাজার। হাওর-বাওড় আর বিস্তীর্ণ সবুজেঘেরা চায়ের বাগান প্রতিনিয়ত পর্যটকদের কাছে টানে। এবারের ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত জেলার পাঁচতারকা হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা দিয়েছে।
এরই মধ্যে একাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজগুলো শতভাগ বুকিং হলেও কিছু সংখ্যক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ ভ্রমণে ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ এই লীলাভূমি মৌলভীবাজারে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ২ শতাধিক পর্যটনস্পট। জেলার সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে চায়ের দেশ নামে খ্যাত শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়।
সবুজের সমারোহে গালিচা বিছানো উচুঁ-নিঁচু নান্দনিক চা বাগানে ঘেরা শহর শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর জীববৈচিত্র্য ভ্রমণপিপাসু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। প্রতিবছর বিশেষ দিন ঈদ কিংবা সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণা যেন বাড়তি মাত্রা যোগ করে।
শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, চা কন্যার ভাস্কর্য, রমেশ রাম গৌড়ের আবিষ্কৃত সাত রঙের চা, বধ্যভূমি ৭১, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, রাবার বাগান, গোল টিলা, হজম টিলা, সীতেশ বাবুর বন্যপ্রাণী সেবাকেন্দ্র, খাসিয়া পুঞ্জি, মনিপুরী সম্প্রদায়ের তাঁতশিল্প, গারোপল্লী, ভাড়াউড়া লেক, শংকর টিলাসহ শ্রীমঙ্গলের অসংখ্য পর্যটনস্পট ঘুরে দেখতে ঈদের ছুটিতে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা চায়ের দেশে আসেন।
এ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন পর্যটনস্পট ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রভাত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, পদ্মছড়া লেক, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষীনারায়ণ দিঘী, ২০০ বছরের প্রচীন ছয়চিরী দিঘী, শমশেরনগর বাঘীছড়া লেক, সুইচভ্যালী, আলীনগর পদ্মলেক, মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি, শমশেরনগর গলফ মাঠ, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, অপরূপ শোভামন্ডিত উঁচু নিচু পাহাড়বেষ্টিত সারিবদ্ধ চা বাগানসহ বাংলাদেশের বৃহৎ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মনিপুরি সম্প্রদায়ের নিরাপদ আবাসস্থল এ উপজেলায়।
এ ছাড়া প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীসহ গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মনিপুরি, টিপরা ও গারোদের নিরাপদ আবাসস্থলও রয়েছে এই উপজেলায়।
ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটি থাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন স্থানীয় পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে গড়ে ওঠা অসংখ্য রিসোর্ট-কটেজ, হোটেল, গেস্টহাউজে রাত্রিযাপন করেন সহশ্রাধিক পর্যটক। তা ছাড়া জেলার পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের ১৫ থেকে ২০ ও কমলগঞ্জের ৩০-৪০ টি দর্শনীয় পর্যটনকেন্দ্র প্রস্তুত হয়েছে পর্যটকদের বরণে। এ জেলায় পাঁচতারকা মানের রিসোর্টসহ ২ শতাধিক রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে।
এদিকে, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন নামি-দামি চাইনিজ ও থাই খাবারের ক্যাফে রেস্টুরেন্টগুলো আলোর সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে এনেছেন খাবারে নতুনত্ব। বাংলা-চাইনিজ, থাইয়ের পাশাপাশি আদিবাসী খাবারও মেন্যুতে রেখেছেন। তাছাড়া ঘুরতে আসা পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে নতুন করে সাজিয়েছেন রেস্টুরেন্টেগুলো।
শ্রীমঙ্গলের চামুং রেস্টুরেন্ট এন্ড ইকো ক্যাফের স্বত্বাধিকারী তাপস দাশ বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে মানসম্মত খাবার ও কিছু স্থানীয় এবং অত্র অঞ্চলের বসবাসকারী যে আদিবাসীরা আছে, তাদের সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে কিছু আদিবাসী খাবারের বিশেষ একটি মেন্যু রয়েছে, আমরা সংযোজন করেছি। অতিথি -গেস্টদের কথা চিন্তা করে আমরা রেস্টুরেন্ট নতুনভাবে সাজিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু এবার সাজেক, সেন্টমার্টিন ও ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রয়েছে, সে জন্য আমরা প্রত্যাশা করছি শ্রীমঙ্গলে উল্লেখযোগ্য হারে পর্যটক সমাগম ঘটবে এবং ভালো ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে।’
শ্রীমঙ্গলের বালিশিরা রিসোর্টের পরিচালক (পরিচালনা ও প্রশাসন) জাহানারা আক্তার বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে পর্যটকদের জন্য আমরা নতুন প্যাকেজ অফার করেছি, যাতে করে তারা একই সাথে ভ্রমণ এবং তাদের থাকার জন্য যতরকম সুযোগ সুবিধা লাভ করা দরকার সবকিছু পেয়ে যায়। এবারই প্রথম পর্যটকদের জন্য কমন সুইমিংপুলের ব্যবস্থা থাকছে। এতদিন বালিশিরার চারটি রুমে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুইমিংপুল ছিল, কিন্তু এখন আমাদের কমন সুইমিংপুলও রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের জন্য আমাদের অলরেডি শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়ে গেছে। আশা করছি গত ২৬ তারিখ থেকে আগামী ৫ তারিখ পর্যন্ত ভালো ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে।’
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের জিএম আরমান খান বলেন, ‘ঈদের টানা ছুটি উপলক্ষে আগামী এক তারিখ থেকে পাঁচ তারিখ পর্যন্ত বুকিং ভালো আছে। গত বছরের ঈদের তুলনায় এ বছর একই রকম অবস্থান রয়েছে।’
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশের সমন্বয়ে উপজেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সবাই টহলে থাকবে। বিশেষ করে পর্যটন স্পটের সীমান্তগুলোতে বিজিবি টহলে থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে মিটিং করেছি, তারা যাতে পর্যটকদের সাথে খারাপ ব্যবহার বা কোনো ধরনের বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় আমাদের টহল টিম সার্বক্ষণিক সক্রিয় থাকবে।’
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘ঈদে পর্যটকদের নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আমাদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবে, এবং যৌথ বাহিনী যেমন, পুলিশ সেনাবাহিনীর পেট্রোলিং ডিউটি, র্যাব এবং পাশাপাশি ব্যাটালিয়ন আনসার মাঠে সক্রিয় থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ঈদে যাতে আমাদের পর্যটক থেকে শুরু করে মৌলভীবাজারবাসী যারা বিভিন্ন পর্যটনস্পট ঘুরতে যাবে, তাদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।’
শাহরিয়ার খান সাকিব/এমজে