Logo

সারাদেশ

যেভাবে জেলার নাম নীলফামারী হলো

Icon

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৯

যেভাবে জেলার নাম নীলফামারী হলো

২২৫ বছর পূর্বে দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নীলফামারীতে নীল চাষের জন্য ‘নীলকুঠি’ নামে একটি নীলের খামার স্থাপন করেছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ফলে নীলকরদের আস্তানা গড়ে উঠে জেলা সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের নটখানা গ্রামে।

ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন (৭৮) জানান, ২২৫ বছর আগে ওই বিল্ডিংটি তৈরি করে ছিল ব্রিটিশরা। এটি দেখলে নীলকরদের নির্যাতন আর অত্যাচারের কথা মনে হয়। নিরীহ কৃষকদের নির্যাতনের ইতিহাস বহন করে ওই দালানটি। সেই ‘নীলখামার থেকে নীলফামারী নামটির উৎপত্তি হয়’।

‘নীলকুঠি’ ছাড়াও নীলফামারীতে পুরাকীর্তি হিসেবে রয়েছে, ভীমের মায়ের চুলা, ১০০ বছরের পুরোনো হাতির পানি খাওয়া কড়াই, নীলসাগর (বিন্যাদিঘী), কুন্দুরাজার মাজার, হাজার বছরের খ্রিস্টান গির্জা, চিনি মসজিদ, হরিশ্চন্দ্র রাজার বাড়ি, হরেন্দ্র গোস্বামী কাছাড়ী বাড়ি, ধর্মপালের গড় ও পাল রাজার বাড়ি। তবে এসব দর্শর্নীয় স্থান সংরক্ষণের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নেই কোনো উদ্যোগ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮০০ সালে ওই গ্রামে নীল চাষের একটি বৃহৎ খামার স্থাপন করে ইংরেজরা। ১৮৪৭-৪৮ সালে নীল চাষে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন কৃষকরা নীলচাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ কারনে তখন নির্যাতনের শিকার হয় এই এলাকার নিরীহ কৃষকরা।

১৮৫৯-৬০ সালের দিকে স্থানীয় কৃষকদের আন্দোলনের ফলে নীলচাষ পুরো বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় ব্যাপক কৃষক আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে পালিয়ে যায় ব্রিটিশ নীলকররা। সেই ‘নীলখামার থেকে নীলফামারী নামের উৎপত্তি হয়েছে’। সেখানে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেই ২২৫ বছর আগের নির্মিত পুরোনো ভবনটি। যা ব্রিটিশদের অত্যাচারের স্মৃতি বহন করে। এটিই মুলত ব্রিট্রিশদের টর্চার সেল ছিল। 

এদিকে, পরবর্তী প্রজন্ম যাতে জানতে পারে জেলা শহরের অদূরে নটখানায় নীলচাষ হতো।

এরই প্রেক্ষিতে ব্রিটিশের তৈরি নীলকুঠি ভবনটি পুরার্কীত হিসেবে সংরক্ষণের দাবি জানান স্থানীয়রা। কিন্ত তা এখন বেদখলে চলে যাচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম অভিযোগ করে বলেন, ‘ইংরেজদের নির্দশন ‘নীলকুঠি’ নীল চাষের সঙ্গে নীলফামারীর ঐতিহ্য, ইতিহাস ও নামকরণ জড়িত আছে। এটি সংরক্ষণের নেই কোনো উদ্যোগ। ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে নীলফামারীর নাম করণের  ইতিহাস ও নিদর্শন।’

পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম তালুকদার (৫৬) বলেন, ‘সে সময় নীলচাষে বাধ্য করা হতো এই অঞ্চলের নিরীহ কৃষকদের। নীলকররা ওই ভবনটি নির্মাণ করে সেখানে তাদের কার্যক্রম চালাত। শুনেছি, ভবনের ভিতরে কৃষক নির্যাতনের টর্চারসেলও ছিল। আর মহকুমা অফিস (কার্যালয়) বর্তমানে জেলা শহরের কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে বিশাল টিনশেড চৌচালা ঘরটি। এখন সেটি অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উৎপাদিত পণ্য জেলা শহরের শাখা ও মাচা নামের দুটি বন্দর দিয়ে নদীপথে তারা মালামাল আনা নেওয়ার করত। এখন সেখানে সপ্তাহে দুইদিন বুধবার ও রোববার হাট বসে। এলাকার মানুষ দলে দলে বেচাকেনা করতে আসে অতি পুরোনো ‘শাখা মাচার হাটে’। এ ছাড়াও সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মুসলিমদের নামাজ পড়ার জন্য দ্বিতল মসজিদ।’

ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. আফসার উদ্দিন (৬৮) বলেন, ‘পুরোনো এই দালানটি নীলকরদের নির্যাতনের স্মৃতি হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে। অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে রয়েছে দালানটি। ১০ বছর আগে শুনেছি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের কাজটি হাতে নেয়। তবে কতদিনে বাস্তবায়ন হবে জানি না।’

এ ব্যাপারে নীলফামারী প্রেস ক্লাব সভাপতি আতিয়ার রহমান (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, ‘এখনো সারাদেশ থেকে ‘নীলকুঠি’ দেখতে ভ্রমণপিপাসু মানুষ সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও দুই ঈদে এবং পূজাপার্বণে দেখতে। এ ছাড়াও নীল গাছের ছবি তুলতে ভিড় করেন সংবাদকর্মীরা।’ 

তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে নীলচাষের ওই নিদর্শনটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষণের কথা শুনেছি। তবে দীর্ঘদিন হলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। যেভাবে আগেও দেখিছি এখনো তাই দেখছি। ইংরেজদের শাসন ও শোষণের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এটি সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।’

টিএএস/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর