ছবি : প্রতিনিধি
সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠ, দৃষ্টিজুড়ে হলুদের অপার সৌন্দর্যের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়, শুধুই হলুদ রঙের বিস্তৃতি। সরিষা ফুলের সোনালি আভায় মোড়ানো মাঠগুলো যেন প্রকৃতির সাজানো হলুদ গালিচায় পরিণত হয়েছে।
ফুল আসায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে মৌমাছির গুঞ্জন, যা পুরো এলাকা জুড়েই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। আর সরিষার ভালো ফলন নিয়ে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। গাইবান্ধার সাত, উপজেলার সদর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি, সুন্দরগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে সরিষা ফুলের এই সৌন্দর্য চোখে পড়েছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরিষার সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। এ যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃশ্য। দেখে যেন মনে হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ মেখে। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক যুগ থেকে আরেক ফুলে পদার্পণ, এ অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত। ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সারি সারি মাঠে ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নানা বয়সের বিনোদনপ্রেমীরা। সরিষা ক্ষেত ঘুরে ঘুরে দেখছেন তারা।
গাইবান্ধা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতবছর জেলার সাতটি উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ১৭৯ হেক্টর। এর মধ্যে সরিষা চাষ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর। এবছর জেলায় সরিষা চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার ২১৫ হেক্টর। এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ১৬ হাজার ৫৫৪ হেক্টর।
ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট এলাকা থেকে ঘুরতে আসা মাহাফুজ হাসান বলেন, ‘সরিষা ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আমরা তিন বন্ধু মিলে এসেছি। এখানে আসলেই মন ভালো হয়ে যায়। আড্ডা দিলাম, ছবি তুললাম খুবই ভালো লাগল।’
শহরের ভিএইড রোড থেকে ঘুরতে আসা বিধান সরকার বলেন, ‘সরিষা ফুল ফোটার পরেই আমড়া কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রতিদিন বিকেলে ঘুরতে আসি। জমির আইল দিয়ে হেঁটে বেড়াই, অনেক মজা করি। এতে খুবই ভালো লাগে আমাদের সবারই। তাই এ সময়টা খুবই চমৎকার কাটছে আমাদের।’
সদর উপজেলার খোলাহাটী ইউনিয়নের ফারাজিপাড়া এলাকার সরিষা চাষি তারা মিয়া (৫৫) বলেন, ‘গত বছর দেড় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছিলাম। কিন্তু এবার তিন বিঘা জমিতে সরিষা রোপণ করেছি। সরিষা আবাদে খরচ অনেক কম, তবে দাম যদি ভালো পেলে আমরা লাভবান হব। শেষ পর্যন্ত কুয়াশা না থাকলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।’
এ বিষয়ে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘রোপা আমন এবং বোরো চাষের মধ্যে বেশি সময় সরিষা চাষে কৃষকদের জন্য খুবই লাভজনক। একদিকে যেমন কৃষকরা সরিষা আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে, পাশাপাশি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরিষা আবাদ করে দেশে যে তেলের চাহিদা সেটি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরিষা আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকদের পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। এছাড়া কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য জেলাতে ১৫ হাজার কৃষককে প্রণোদনার আওতায় সরিষা বীজ এবং সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া কৃষি পুনর্বাসন আওতায় ১১ হাজার ৮০০ কৃষককে সরিষা বীজ এবং সার প্রদান করা হয়েছে। এতে করে এ জেলায় সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরিষার সঠিক মূল্য পেলে আগামী বছর এ জেলায় সরিষা আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।’
আতিকুর রহমান/এমআই