সীমান্তে পড়েছিল চা শ্রমিকের নিথর দেহ
মৌলভীবাজার (বড়লেখা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:৩৪
নিহত যুবক গোপাল বাক্তি। ছবি : প্রতিনিধি
বৈধ কাগজপত্র ছাড়া এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া অর্থাৎ অনুপ্রবেশ আইনের চোখে অপরাধ। আইনে তার শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু নিরস্ত্র অবস্থায় কেউ সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা করলে তাকে কোনোভাবেই গুলি করে হত্যা করা যায় না বলে ফেলানী হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে ২০১৫ সালে মত দিয়েছিল খোদ ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
এরপর থেকে আদৌ সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের একাধিক বৈঠকেও সীমান্ত হত্যা বন্ধের কথা ভারতের পক্ষ থেকে বলা হলেও আদৌ বন্ধ হয়নি। বরং আজ এই সীমান্তে তো কাল ওই সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনা ঘটছেই। সম্প্রতি যশোরে তিন যুবককে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে হত্যার জের কাটতে না কাটতেই ফের মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্তের জিরো লাইনের পাশে গোপাল বাক্তি (৩৬) নামের এক চা শ্রমিককেও গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশে হস্তান্তর করে বিজিবি। নিহত গোপাল বড়লেখা উপজেলার নিউ সমনবাগ চা বাগানের মোকাম সেকশনের সাবেক ইউপি সদস্য অকিল বাক্তির ছেলে। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) পাহাড় থেকে বাঁশ আনতে গিয়ে নিখোঁজ হন তিনি।
স্বজনদের অভিযোগ, অসাবধানতাবশত সীমান্তের জিরো লাইনের কাছে গেলে গোপাল বাক্তিকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এসময় তার সাথে আরও কয়েকজন শ্রমিক ছিল। তারা বিএসএফের গুলির ভয়ে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পান।
স্থানীয়রা জানান, শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে কয়েকজন চা শ্রমিক বাঁশ কাটতে পাথারিয়া পাহাড়ের দুর্গম জঙ্গলে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন গোপাল। সেখান থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তারা খবর পান বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের বিওসি টিলা বিওপির সীমান্ত পিলারের (নম্বর-১৩৯১ ও ১৩৯২) মধ্যবর্তী জিরো লাইনের গভীর জঙ্গলে একটি লাশ পড়ে আছে। সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয় তার নিথর দেহ।
স্থানীয়রা আরও জানান, নিহত গোপালের শরীরে গুলির দাগ রয়েছে। তাদের অভিযোগ বিএসএফ গুলি করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ ফেলে গেছে।
নিহত গোপাল বাক্তির সাথে থাকা শ্রমিকদের বরাত দিয়ে দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ইমরান আহমদ বলেন, ‘গোপাল বাক্তিসহ আরও কয়েকজন দিনমজুর পাহাড়ে বাঁশ কাটতে যান। এসময় বিএসএফ গুলি করলে গোপাল বাক্তি নিহত হন। তার সঙ্গে থাকা অন্যরা সেখান থেকে পালিয়ে আসলেও ভয়ে মুখ খুলছেন না তারা। ‘
এ বিষয়ে বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মেহেদী হাসান জানান, ‘রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকালে কয়েকজন চা শ্রমিক বিজিবি বিওসিটিলা বিওপির টহল দলকে মরদেহ পড়ে থাকার বিষয়টি জানায়। পরে সেখান থেকে গোপালের মরদেহটি উদ্ধার করে বড়লেখা থানায় পাঠানো হয়। ’
তিনি আরও বলেন, ‘গোপালের দেহে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও প্রাথমিকভাবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
এ বিষয়ে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘দুর্গম এলাকা থেকে চা শ্রমিক গোপালের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।’
রেজাউল হক ডালিম/এমএম/এমআই