Logo
Logo

সারাদেশ

লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড : ৩ বছরেও সন্ধান মেলেনি ৯ মরদেহের

Icon

মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫২

লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড : ৩ বছরেও সন্ধান মেলেনি ৯ মরদেহের

ছবি : প্রতিনিধি

ঝালকাঠি সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হলো আজ। ভয়াবহ লঞ্চ দুর্ঘটনায় এদিন প্রাণ হারায় ৪৯ জন যাত্রী। এদের মধ্যে ৩৭ জনের বাড়ি বরগুনায়।ট্রাজেডির ৩ বছর পূরণ হলেও গণকবরে দাফন করা সন্ধান মেলেনি ৯ মরদেহের। তিন বছর অতিবাহিত হলেও সেই রাতের স্মৃতিতে এখনো আঁতকে ওঠে নিহতদের স্বজনরা।

অনেক পরিবারই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিন কাটাচ্ছে চরম অনিশ্চয়তায়।

২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঢাকার সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসে বরগুনাগামী লঞ্চ অভিযান-১০  দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় লঞ্চের ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত শুরু হয়। লঞ্চটি তখন নলছিটি উপজেলা অতিক্রম করছিল। আগুন লাগার পরে লঞ্চটি নলছিটি ও ঝালকাঠি ঘাটে না থামিয়ে সুগন্ধা নদী ধরে চলতে থাকে। তখন দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল লঞ্চটিতে। পরে লঞ্চটি ঝালকাঠির দিয়াকুল নামক স্থানে গিয়ে নদীর তীরে নোঙর করে। তখন ভাগ্যক্রমে অনেক যাত্রী লঞ্চ থেকে তীরে নামতে পেরেছিল। অনেকে সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও অনেকের সলিল সমাধি হয় সুগন্ধা নদীতে। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের পুরো টিম ঘটনাস্থলে এসে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আগুনে যাত্রী পুরে যাওয়ার ঘটনায় ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর নৌ আদালতে ৮ জনকে আসামি করে মামলা করে। সেদিনই আদালতের বিচারক ও দায়রা জজ জয়নব বেগম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন লঞ্চ মালিকসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। 

২৭ ডিসেম্বর দুপুর অভিযান লঞ্চ-১০ মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই ঘটনায় লঞ্চের মালিক সহ ২৫ জনকে অজ্ঞাত রেখে বরগুনা মুখ্য বিচারিক আদালতে এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একটি মামলা দায়ের করে।

বরগুনা পোটকাখালী গণকবরে দাফন করা অজ্ঞাতদের শনাক্ত করতে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ঢাকা সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের একটি টিম ২৩ মরদেহের পরিচয় শনাক্তের অনুকূলে ৪৮ স্বজনের নমুনা সংগ্রহ করেন। যার মধ্যে ১৪ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত হলেও অজ্ঞাত থাকে ৯ মরদেহের। 

বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের মিতু আক্তার জানান, ‘ঢাকায় মায়ের চিকিৎসা শেষে একই পরিবারের ৬ জনকে নিয়ে অভিযান লঞ্চে বাড়ি ফিরছিলেন। আগুন লাগার পরে লঞ্চটি যখন তীরে ফিরছিল, তখন মা লাফ দিতে গিয়ে পরে গেলে অপারেশন ক্ষতস্থানে আঘাত প্রাপ্ত হয়। এতে রক্তক্ষরণ হলে মা অসুস্থ অবস্থায় মারা যায়।’

সেই রাতের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মো. সাদিকুর রহমান ইতালির ভেনিস থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর সকালে ইতালি থেকে ঢাকায় এসে বিকেলে অভিযান ১০ লঞ্চ যোগে বরগুনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। বরিশাল ঘাট পাড়ি দেওয়ার পর ঘুম ভেঙে যায়। এরপরে লঞ্চটির বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম হঠাৎ দেখতে পাই পিছনে আগুন লেগেছে। লঞ্চের স্টাফদের গাফিলতির কারণে সেদিন এতগুলো প্রাণ ঝড়ে গেলো। তারা পালিয়ে না গিয়ে যদি লঞ্চটি যখন ভিড় ছিল। তখন নোঙর ফেলতো মানুষগুলো সহজেই নেমে যেতে পারতো। আমি ও আমার পরিবার নিরাপদে নেমে যেতে পারলেও চোখের সামনে পুড়তে দেখেছি মানুষকে। আজ তিন বছর পার হলেও এখনো দোষীদের বিচার হয়নি। দ্রুততম সময়ে তাদের বিচার হোক এটাই প্রত্যাশা।’

অভিযান লঞ্চের দুর্ঘটনা নিহত ৪০ জনের মধ্যে অনেক পরিবার কাটছে আর্থিক অস্বচ্ছলতায়। পরিবারের আয়ের প্রধান ব্যক্তিকে হারিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়ে আছে। গণকবরে দাফন করা ৯ মরদেহের পরিবারের হদিস মেলেনি এখনো। নির্মিত হয়নি আজও স্মৃতি স্তম্ভ। অবহেলায় পড়ে আছে গণকবর, নেই কোন রক্ষণাবেক্ষণ। 

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘অগ্নি দুর্ঘটনায় নিহত অসহায় পরিবারের তালিকা যাচাই-বাছাই করে মানবিক ফান্ড থেকে দেয়া হবে আর্থিক সহায়তা। দুর্ঘটনায় নিহতের স্মরণে নির্মিত হবে স্মৃতি স্তম্ভ।’

এমআই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর