শহীদদের স্বপ্নের দেশ গড়তে দখল-চাঁদাবাজি বন্ধের আহ্বান
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮:২৯
দখলবাজ ও চাঁদাবাজমুক্ত দেশ গড়তে নেতাকর্মীদের ত্যাগ স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যহীন দেশ গড়তে চাই; যে দেশে দখলবাজি, চাঁদাবাজি চলবে না। দুর্বলেরা সবল দ্বারা অত্যাচারিত হবে না। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা পাবে। সমতা-সাম্য কায়েম হবে দেশে। জুলাই আন্দোলনে শহীদরা যে দেশ চেয়েছিলেন তার বাস্তব নমুনা দেখাতে চাই।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আয়নাঘর সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে ড. শফিকুর রহমান বলেন, আয়নাঘরের মানুষগুলোকে নিয়ে আমার পাশের সেলে রাখা হতো। আয়নাঘরে থাকা মানুষগুলো আমাকে বলেছেন, বহু বছর ধরে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে, অন্ধকার ঘরে রাখা হয়েছে। কিন্তু তা স্বীকার করা হয়নি। এদের কাউকে কাউকে নাটকের ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হয়েছে।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মানুষটা হুমকি দিয়েছিল ছাত্রদের এই বলে যে, বাড়াবাড়ি করলে শাপলা চত্বরের ভাগ্যবরণ করতে হবে। এই লোকটা আত্মস্বীকৃত খুনি।
রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের নাম উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, আপনাদের পাশের জেলায় বুকপেতে বলেছিল, ‘বুকের ভিতর তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। আবু সাঈদরা বলেছিল উই ওয়ান্ট জাস্টিস। আমরা একটা বৈষম্যহীন সমাজ চাই। আমরা একটি মানবিক সমাজ চাই। আমরা একটা গর্বের বাংলাদেশ চাই।
এই বাংলাদেশ গড়া হবে শহীদদের রক্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে। এই দেশ গঠন করতে হলে দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলবে না। অফিস আদালত কোর্ট কাচারি থেকে ঘুষ দুর্নীতি নির্মূল করতেই হবে।
বৈষম্যহীন দেশ গড়ার আহ্বান জানিয়ে ড. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে শহীদরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে সেই দেশের বাস্তব নমুনা দেখানো হবে। দেশ হবে চাঁদাবাজ-দখলবাজহীন। সেখানে সন্ত্রাস থাকবে না। শ্রমিকরা তার অধিকার বুঝে পাবে। সমতা আর সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে।
গাইবান্ধায় কোনো উচ্চ শিক্ষার কেন্দ্র নাই উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, এই এলাকার মানুষ ইসলামপ্রিয় বলেই বৈষম্য করা হয়েছে। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে গাইবান্ধায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান। তিনি এও জানিয়ে দেন জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে জেলাবাসীকে কোনো কিছু দাবি করে আদায় করতে হবে না। স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যাবে।
কর্মী সম্মেলনে গাইবান্ধা জেলার সাতটি উপজেলার ৮২টি ইউনিয়ন থেকে বিপুল সংখ্যক জামায়াত নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনটি জামায়াতের বার্ষিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতি বছর আয়োজিত হয়। সম্মেলন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করার জন্য জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে সাড়ে ৬শ স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে।
এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ড. আব্দুর রহিম এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ।
দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ পর গাইবান্ধার এই মাঠে প্রকাশ্য সমাবেশ আয়োজন করেছে জামায়াত। এর আগে ২০০২ সালে জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা শহীদ দেলওয়ার হোসেন সাঈদী এই মাঠে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে বক্তব্য রেখেছিলেন।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ড. শফিকুর রহমানের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাঙ্ঘাতিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে, যা এবারের সম্মেলনে দৃশ্যমান হয়েছে। জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে, তারা সম্মেলন সফল করার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছেন।
আতিকুর রহমান/এমবি