কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গলায় জুতার মালা পরানোর ঘটনায় মামলা করেছেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত নয়টার দিকে বাংলাদেশের খবরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান।
তিনি বলেন, ‘ওনার (মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই) এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি মামলা রুজু করছি।’
বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে, জুতার মালা গলায় পরানোর ঘটনায় ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করছেন- এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘ওটি মানহানির বিষয় না। পেনাল কোডে মাল্টিপল (একাধিক) অভিযোগ করেছেন তিনি। ওই অনুযায়ী মামলাটি রুজু করা হচ্ছে।’
থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মামলা ইতোমধ্যে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে, কৃষক লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) চৌদ্দগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রসমাজ’। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গুরুত্বর্পূণ স্থান প্রদক্ষিণ শেষে শহরের হায়দার শপিং কমপ্লেক্সর সামনে অবস্থান নেয় ফ্যাসীবাদী ছাত্রসমাজ। সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে নেতৃত্ব দেন ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রসমাজ কুমিল্লা জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মামুন মজুমদার, সদস্য জাহিদুল ইসলাম, নাসিম মিয়াজি ও আবুল হাসনাত সিয়ামসহ অনেকে।
সমাবেশে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একবার রিকশা লীগ, আনসার লীগ হয়ে আসে। এবার এসেছে তারা কানু লীগ হয়ে।’
উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করবেন। আমরা এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখছি না। দ্রুত ফ্যাসিবাদীদের বিচারের কাজ শেষ করতে হবে।’
মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষকলীগ নেতা আব্দুল হাই কানু সম্পর্কে তারা বলেন, ‘তিনি হত্যাসহ নয়টি মামলার আসামি। এখনো প্রশাসন তাকে গ্রেপ্তার করছে না। অথচ একটি জুতার মালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল হাই কানু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।’ তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করার জোর দাবি জানান তারা।
বক্তারা বলেন, ‘কানু মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়কে সামনে নিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছেন। আর কানুর ঘটনাকে পুঁজি করে একটি মহল আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র-জনতা তা হতে দেবে না।’
প্রসঙ্গত, গত রোববার দুপুরে চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী সমালোচনা শুরু হয়।
পরিবারের অভিযোগ, লাঞ্ছনাকারীরা সবাই স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন উপজেলা জামায়াতের নেতারা। পরে সোমবার বিবৃতি দিয়ে ঘটনায় অভিযুক্ত দুই সমর্থককে বহিষ্কারের কথা জানায় জামায়াত।
এনএমএম/এমজে