জাহাজে ৭ খুন
হত্যায় অভিযুক্ত আকাশের বেড়ে ওঠা যেভাবে
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:১০
চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবাহী একটি জাহাজে সাতজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার আকাশ মণ্ডল। একসময় দরিদ্র গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা আকাশ বর্তমানে দেশের আলোচিত এক নাম। র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, আকাশ তার পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাহাজের মাস্টারকে ঘুমের ওষুধ মেশানো খাবার খাইয়ে হত্যা করেন। এরপর ধরা পড়ার ভয়ে একে একে আরও ছয়জনকে হত্যা করেন তিনি।
ছোটবেলায় বাবার মৃত্যুর পর আকাশের মা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। এরপর বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর গ্রামের দরিদ্র নানা-নানির পরিবারে বেড়ে ওঠেন আকাশ। নানা-নানির মৃত্যুর পর বড়ভাই বিধান মণ্ডলের সাথেই থাকতেন তিনি। বিধান মণ্ডলও ধর্মান্তরিত হয়ে নাম পরিবর্তন করেন। বর্তমানে তার নাম আবির হোসেন।
স্থানীয়রা জানান, আকাশ মণ্ডল এলাকা ছেড়ে বহু আগে চলে গেছেন। এখানে থাকা অবস্থায় অভাবের তাড়নায় চুরির মতো ছোটখাটো অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পাঁচ-ছয় বছর আগে নারীঘটিত একটি অপবাদও ওঠে তার বিরুদ্ধে। তবে মানুষ হত্যা করার মতো ঘটনা তার মধ্যে ছিল না।
তাদের প্রতিবেশী জিহাদুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে আকাশকে এলাকায় দেখিনি। অভাব ও অভিভাবক না থাকায় এলাকায় মাছ-শাক চুরির মতো এক-দু’বার জড়িয়েছেন আকাশ। তবে এমন নৃশংস হতে পারে তা মনে হয়নি। সে এলাকায় শান্ত স্বভাবেরই ছিল। মাছ ধরা এবং দিনমজুরি কাজ করতো। বছর চারেক আগে ফকিরহাটের ফলতিতা বাজার এলাকায় সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির একটি ছোট দোকান দিয়েছিল দুইভাই। তবে ওই দোকান বেশিদিন টেকেনি।
ওই গ্রামের মো. জুয়েল বলেন, নারীঘটিত একটি বিষয় নিয়ে পাঁচ-ছয় বছর আগে এলাকা ছেড়ে চলে যায় সে। দুই বছর আগে একবার এলাকায় এসে থাকা শুরু করলে ভাইয়ের সাথে বনিবনা না হওয়ায় আবারও নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এরপর আর তাকে দেখিনি। শুনেছি, মাঝে একবার নাকি এসেছিল। অনলাইনে দেখলাম, জাহাজে ৭ খুন করেছে এই আকাশই।
আকাশের বড়ভাই আবির বলেন, দুই বছর আগে বাড়ি ছাড়ার পর গত বছর একবার বাড়িতে একদিনের জন্য এসেছিল। তার সাথে যোগাযোগ নেই। একটু মনকষাকষি হয়েছিল আমার সাথে, তারপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। এলাকা থেকে যাওয়ার পরই জাহাজে কাজ নেয়। তারপর একবারই বাড়িতে এসেছে, তাও গত বছরের শীতকালে। তিনি আরও জানান, তাদের বাবার বাড়ি পাশের মোল্লাহাট উপজেলার কোদালিয়া এলাকায়। ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার পর মা ধর্মান্তরিত হয়ে অন্যত্র চলে যান। পরে ফকিরহাটের মূলঘর এলাকায় সরকারি জায়গায় ঘর বেঁধে নানা-নানির সাথেই থাকতো তারা।
আকাশ বিয়ে করেছে কিনা সে বিষয়েও জানা নেই উল্লেখ করে আবির বলেন, এলাকায় থাকতে তো বিয়ে করেনি। জাহাজে জাহাজে থাকতো, এটাই জানতাম। আর আমাদের কারো সাথেই কোনো কথা হতো না। টিভিতে দেখে লোকে বলছে। প্রথমে তো বিশ্বাস করিনি। পরে দেখি আকাশকেই দেখায়। সে যদি ওই ঘটনা ঘটায়, তবে তার শাস্তি হোক। এই ঘটনার পর বাড়িতে কারও সাথেই যোগাযোগ করেননি বলে দাবি তার ভাইয়ের। এলাকায়ও কেউ তাকে এক বছরের মধ্যে দেখেনি বলে জানান তিনি।
ফকিরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির বলেন, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে সারবাহী জাহাজে সাতজনকে হত্যার ঘটনায় আটক আকাশ মণ্ডলের নামে আমাদের থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ নেই।
আবু তালেব/এমবি