দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে, খুশি ক্রেতারা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:২৪
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ঝিনাইদহের বিভিন্ন হাটবাজারে নতুন মুড়িকাটা ও পুরোনো পেঁয়াজের দাম একেবারেই পড়ে গেছে। এতে ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ খুশি হলেও নাখোশ হয়েছেন পেঁয়াজচাষি ও মজুদ করে রাখা ব্যবসায়ীরা। দেড় সপ্তাহ আগে প্রতিমন পেঁয়াজ ২৮’শ থেকে ৩২’শ টাকায় বিক্রি হলেও বাজারে এখন ১২’শ থেকে ১৪’শ টাকা। পাইকারি পেঁয়াজ ক্রেতারা ধারণা করছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরো দাম কমে যেতে পারে। যা পুরোনো পেঁয়াজ মজুদকারীদের মধ্যে একরকম দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তর পাইকার হাট লাঙ্গলবাঁধ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমন নতুন পেঁয়াজ এক হাজার থেকে ১২’শ এবং পুরোনো পেঁয়াজ ১৪’শ থেকে ১৫’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত রোববারের হাটেও ১৮শ থেকে ১৯’শ টাকা আর পুরোনো পেঁয়াজ ২ হাজার টাকা থেকে ২২’শ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
লাঙ্গলবাঁধ বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা চাষি আব্দুর রহিম বলেন, এবার ৫ কাঠা জমিতে মুড়ি পেঁয়াজ আবাদ করে প্রায় ১৮ মন পেঁয়াজ তিনি পেয়েছেন। ভেবেছিলেন প্রতিমন ৪-৫ হাজার টাকায় বেচবেন। কিন্তু দাম দিনকে দিন পড়েই যাচ্ছে। বাজার প্রতিমন নতুন পেঁয়াজ এখন ১২’শ থেকে ১৪’শ টাকা। অথচ দেড় সপ্তাহ আগেও প্রতিমন পেঁয়াজ ২৮’শ থেকে ৩২’শ টাকায় বিক্রি হয়, যা তার মত চাষিদের হতাশ করেছে।
পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা একাধিক কৃষক জানান, চলতি মৌসুমে অতিবৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তাদের রোপণ করা মুড়িকাটা পেঁয়াজ এক দফা নষ্ট হয়েছে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বাড়তি মূল্যে পেঁয়াজের বীজ কিনে রোপণ করতে হয়েছে। এতে এই মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনে প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। বর্তমানে মাঠ থেকে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর এই সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার। এতে বাজারে পেঁয়াজের বড় দরপতন হয়েছে।
একই বাজারে শৈলকুপার পাইকার ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম জানান, একমাস আগে ঝিনাইদহের বাজারে প্রতিমন পেঁয়াজ ৪৮’শ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এখন প্রায় ৪ গুণ কমেছে। বর্তমানে সরকার ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি করছে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ ঢুকায় বাজারে দিন দিন পেঁয়াজের দাম কমছে।
জেলার সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে বিবেচিত শৈলকুপার সাপ্তাহিক হাটে খুলনার দৌলতপুরের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ওসমান আলী জানান, গত শনিবার প্রতিমন নতুন পেঁয়াজ ১৮’শ থেকে ১৯’শ টাকা আর পুরনোগুলো ২ হাজার টাকা থেকে ২২’শ টাকা বিক্রি হলেও তিনদিনের ব্যবধানে মনপ্রতি ৪-৫শ টাকা কমে যাওয়ায় পাইকারি ক্রেতারাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে সাপ্তাহিক হাটের দিন বাজার করতে এসেছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী নবিরুল আলম ও তার সহকর্মী সুভাস সাহা। তারা বলছেন, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিমন পেঁয়াজের দাম ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা কমে যাওয়ায় তার মত সাধারণ ক্রেতারা সবাই খুশি। গৃহবধূ স্বপ্না আরাও বললেন একই সুরের কথা। তাদের মতে এমন দাম হলে তা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে।
শৈলকুপার ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে ভাটই পাইকার হাটে কথা হয় সোবহান নামের এক পেঁয়াজ মজুদকারীর সাথে। তিনি বলেন, পুরোনো পেঁয়াজের দাম বাড়বে আশায় ৬ মাস আগে তিনি ২৫’শ ও ৩ হাজার টাকা মনপ্রতি ৩০ মন পেঁয়াজ কিনে রেখেছেন। কিন্তু হঠাৎ সরকার বাইরের দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করায় দাম অর্ধেকের বেশি নেমে গেছে। এতে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি। পেঁয়াজের দাম না বাড়লে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে জানান তিনি।
খুলনার দৌলতপুর ও ফরিদপুরের পাইকারি পেঁয়াজ ক্রেতারা ধারণা করছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে আরো কিছু দাম কমে যেতে পারে যা পুরোনো পেঁয়াজ মজুদকারীদের ভিত অনেকটা নাড়িয়ে দিয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, চাহিদার ঘাটতির কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম কখনও কখনও অস্বাভাবিক বেড়ে যায় অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে। বাজারে একেতো নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ উঠেছে, তার ওপর আবার আমদানিকৃত পেঁয়াজও বাজারে ঢুকছে নিয়মিতই। ফলে এই মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। তবে চাষিরা এই দামে মোটেও খুশি নন।
বুরহান উদ্দীন/এমবি