মেঘনায় ৭ খুন
নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি
চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:১৫
ছবি : বাংলাদেশের খবর
চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে জাহাজে সাত খুনের রহস্য উদ্ঘাটন, ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং জড়িতদের বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন নৌযান শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে এই কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের হরিণা ফেরিঘাট, পুরাণ বাজার, বড় স্টেশন মোলহেড ও লঞ্চঘাট এলাকায় বহু পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ নোঙর অবস্থায় দেখা গেছে।
শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরান বাজারে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পণ্য উঠানাম করলেও শুক্রবার সকাল থেকে তা বন্ধ রয়েছে। ওই এলাকার রনাগোয়াল এলাকায় বেশ কয়েকটি পণ্যবাহী জাহাজ নোঙর অবস্থায় রয়েছে। ওইসব জাহাজের মাস্টার, চালক ও বেশ কয়েকজন সুকানি এবং খালাসি পাড়ে এসে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় তারা জাহাজে সাত খুনের বিচার ও বিভিন্ন দাবিসহ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত নৌ পথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
কর্মবিরতি থাকা এমভি এনডিই-১০ জাহাজের মাস্টার রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় একযুগ জাহাজে চাকরি করছি। এই ধরনের ঘটনা কখনো দেখিনি। এই ঘটনায় সাতজন মায়ের বুক খালি হয়েছে। এটি নতুন ঘটনা নয়। এর আগেও ঘটেছে। তবে তখন হয়ত দুই একজন খুন হয়েছে। এই রুটে চলাচল করে দেখেছি বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, চাঁদপুরের হাইমচর, মাঝের চর এলাকা ডাকাতের অভয়ারণ্য। এসব এলাকায় সব সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটে।
ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড এর মালিকানাধীন এমভি এনডিই-৯ জাহাজের চালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার ভোর রাতে আমরা চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরে এসে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বানে আমরা কর্মবিরতিতে আছি। আমরা এই সাত খুনের বিচার, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ও নৌ পথের নিরাপত্তা দবি করছি।
একই কোম্পানির এমভি এনডিই-১০ জাহাজের প্রধান চালক বাবুল মিয়া বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মবিরতি চলমান থাকবে। আমাদের সকল আন্দোলনের সাথে নিরাপত্তার বিষয়টি থাকে। কিন্তু বিগত কোনো সরকার আমাদের দাবির প্রতি গুরুত্ব দেয়নি। নৌ পথের নিরাপত্তা জোরদার থাকলে এমন খুনের ঘটনা ঘটতো না। আমরা জেনেছি সাত খুনের ঘটনার দিন নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডকে কয়েকবার ডাকা হয়েছে। তারা কোনো উত্তর দেয়নি। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন চাঁদপুর জেলা কমিটির সভাপতি হারুনুর রশিদ বলেন, আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য ডাকা হয়নি।
কোস্ট গার্ড চাঁদপুর স্টেশন কমান্ডার লেফট্যানেন্ট ফজলুল হক বলেন, চাঁদপুর নৌ সীমানায় আমাদের নিয়মিত টহল আছে। আগের চাইতে এখন টহল আরো জোরদার করা হয়েছে।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, নৌযান শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে কর্মবিরতি করছে। এটি তাদের বিষয়। আমরা চাঁদপুর নৌ অঞ্চলে সার্বিক নিরাপত্তা অব্যাহত রেখেছি।
আলআমিন ভূঁইয়া/এমবি