Logo
Logo

সারাদেশ

রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে ‘চাঁদাবাজি’ করতেন যুবলীগ নেতা

Icon

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৫৪

রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হতে ‘চাঁদাবাজি’ করতেন যুবলীগ নেতা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যুবলীগ নেতা মেহেদী বিন সালাম (৩৫) এর নেতৃত্বে একটি অসহায় পরিবারের উপর হামলা, ভাঙচুরসহ ১৩ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সামাজিক বিচার সালিশে হেনস্তার শিকার হয় অভিযোগকারী পরিবার। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়েছে। 

জানা গেছে, মেহেদি বিন সালাম চৌদ্দগ্রাম উপজেলার যুবলীগ নেতা। চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা মিজানুর রহমান এবং উপজেলা শ্রীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও  উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শাহজালাল মজুমদারের অনুসারী। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী বিন সালাম দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি করে আসছিলেন। তিনি রাজনৈতিক জীবনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। তার নামে এলাকায় চলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম। তার এ কাজে সহযোগিতায় ছিলেন স্থানীয় কিছু যুবক। একটা সময় এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করতে গেলেই দিতে হতো মোটা অংকের চাঁদা। 

চাঁদার টাকা না দিলে তাদের উপর নেমে আসত জুলুম-নির্যাতন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে তিনি এখনো এলাকায় চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন। গত ২০ নভেম্বর বিকালে যুবলীগ নেতা মেহেদী মোটরসাইকেলযোগে কতিপয় যুবককে সাথে নিয়ে কাশিনগর ইউনিয়নের কাতালিয়া গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মো. সেলিম মিয়ার (৪৪) বাড়িতে গিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসেন।

চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সেলিম মিয়ার সাথে চাঁদাবাজদের বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। পরে ওই দিন আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টায় আরও কিছু সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজনসহ সংঘবদ্ধ হয়ে যুবলীগ নেতা মেহেদী সেলিম মিয়ার বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় হামলাকারীরা সেলিম মিয়ার ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি করে। 

পরে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় এলাকাবাসী ধাওয়া করে একটি জিক্সার এসএফ মোটরসাইকেলসহ ২/৩ জন হামলাকারীকে আটক করেন। স্থানীয় জনতা তাৎক্ষণিক বিষয়টি চৌদ্দগ্রাম আর্মি ক্যাম্পকে অবহিত করেন। পরে এ বিষয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ রাতে কল দিলে পরদিন সকালে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এর আগে যুবলীগ নেতা মেহেদীর নেতৃত্বে তার সহযোগীরা আটকদের জনতার কবল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে থানা পুলিশ আটক মোটরসাইকেলটি থানায় নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার স্থানীয় যুবলীগ নেতা মেহেদী বিন সালাম, তার সহযোগী ইউছুফ, নাঈম, আবু হানিফ, জহির উদ্দিন বাবরসহ ৫ জনের নামে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৫ নম্বর আমলী আদালতে দণ্ডবিধির ৪৪৭/৩৮৫/৩৮৬/২২৫/৪২৭/৫০৬/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। 

আদালতে মামলা হওয়ার পর আসামিরা এখনো ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি-ধমকি অব্যাহত রাখায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পরিবার প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা মেহেদী বিন সালাম বলেন, ‘আমি ঘটনার সাথে জড়িত নই। বরং তারা আমাকে রাতে তাদের বাড়ির পাশের রাস্তায় পেয়ে আমাকে আক্রমণ করে এবং আমার মোটরসাইকেল আটক করে রাখে। বিষয়টি নিয়ে পরদিন সকালে গ্রামে একটি সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে তারা জরিমানা দিতে বাধ্য হয়।’

রাত তিনটায় অন্যের বাড়ির রাস্তায় কী কাজে গিয়েছেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে মেহেদী বিন সালাম কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.টি.এম আক্তার উজ জামান বলেন, ‘ঘটনাটি সম্পর্কে জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ/এমজে

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর