পটিয়ায় প্রশাসনের তোয়াক্কা করছেন না মাটি খেকোরা!
পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৩
চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৃষি জমি ও পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে একটি চক্র। প্রশাসন অবগত থাকা সত্ত্বেও মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় দিন দিন চক্রটির কার্যক্রম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি জমির টপসয়েল কাটার পাশাপাশি পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে। যা পরিবেশ ও কৃষির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
স্থানীয়রা জানান, শুষ্ক মৌসুম এলেই মাটি খেকোরা নেমে পড়ে কৃষি জমি ও পাহাড়ের মাটি কাটতে, যেখানে প্রশাসনের ভূমিকা কার্যকরভাবে না থাকায় তাদের দমন করা যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে যে, এই চক্রের সদস্যরা প্রশাসনের অনুমোদন দাবি করে প্রতিটি ট্রাকের জন্য ৩-৪ হাজার টাকা নেন।
সর্বশেষ স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত দেড়টার দিকে উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবণ কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে হাইদগাঁও ইউনিয়নের মল্লপাড়া গ্রাম থেকে একটি ট্রাক ও চালক মো. সুমনকে (৪২) আটক করা হয়। পরে ট্রাকটি জব্দ করে ও চালক সুমনকে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫/১ ধারা অনুযায়ী ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সরেজমিন তদন্তে জানা যায়, মাটি খেকোরা হাইদগাঁও, ধলঘাট ইউনিয়নের গৈড়লা, খরনা ইউনিয়ন, শ্রীমাই আমতলসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়দের মতে, যারা বাঁধা দিতে যান, তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়।
এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মাটি কাটার কারণে জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। পাহাড় কেটে সমতল করা হলে পরিবেশের ভারসাম্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, কৃষিজমির টপসয়েল কেটে নেওয়ার ফলে জমির উর্বরতা কমে যায় এবং সেই মাটি পূরণ হতে ৮-১০ বছর সময় লাগে।
এ বিষয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশ আইনজীবী জাফর হায়দার বলেন, ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনে টপসয়েল কাটা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এই আইনের আওতায় জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
চট্টগ্রাম পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতা আলিউর রহমান বলেন, পাহাড় কেটে সমতল করায় পরিবেশে জলবায়ুর বিপর্যয় ঘটছে।
উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবণ কুমার বিশ্বাস বলেন, এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মাটি কাটার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছি। আমরা প্রয়োজনে আরও অভিযান চালাব এবং স্থানীয়দের সহযোগিতায় এ চক্রের কার্যক্রম বন্ধ করার চেষ্টা করব। এখনও যদি কোথাও কৃষি জমি ও পাহাড় কাটা হয়, তবে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হেলাল উদ্দিন নিরব/এমবি