Logo
Logo

সারাদেশ

বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ : ৮ বাড়িতে আগুন, আহত ২৫

Icon

বাঘেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৪

বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ : ৮ বাড়িতে আগুন, আহত ২৫

ছবি : বাংলাদেশের খবর

বাগেরহাটে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ভয়াবহ অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে রুহুল মেম্বার ও তার ৭ ভাইয়ের বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। বুধবার ( ৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কুলিয়াদাইড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ৫ আগস্টের পর থেকে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমিন ওরফে রুহুল মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের মধ্যে প্রকাশ্যে বিরোধ দেখা যায়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজনের মাঝে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সম্প্রতি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে এই বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। সবশেষ সোমবার রাতে উভয় পক্ষের মধ্যে মারপিট ও মোটরসাইকেল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৫জন আহত হন।

এ ঘটনার জেরে বুধবার দুপুরে ও বিকেলে উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে শতাধিক লোকজন রুহুল মেম্বার ও তার ৭ ভাইয়ের বাড়িতে হামলা, লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ চালায়। এসময় আগুনে পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় রুহুল মেম্বরাসহ তার ৮ ভাইয়ের বাড়ি-ঘর।

রাত ৮টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রুহুল মেম্বরাসহ তার ৮ ভাইয়ের বসত ঘরে অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৬টি মোটরসাইকেল এবং কয়েকটি ফ্রিজসহ মূল্যবান জিনিসপত্র পুড়ে একদম ছাই হয়ে গেছে। পুরুষশূন্য বাড়িগুলোতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বিলাপ করছেন। বসত ঘর ছাড়াও আগুন দেওয়া হয়েছে গোয়াল ঘর, হাঁস-মুরগির খোপ এবং খড়ের গাদায়। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে চিরুলিয়া স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যায়।

পুড়ে যাওয়া রুহুলের পরিবারের সদস্যদের দাবি, ‘মোস্তাফিজের লোকজন কয়েকদিন ধরে আমাদেরকে মারধরের চেষ্টা করছিল। এর জন্য আমাদের পুরুষরা গা ঢাকা দিয়েছিল। আর আজকে বাড়ির মধ্যে এসে আমাদের সবশেষ করে দিয়ে গেল।’

রুহুল মেম্বারের স্ত্রী রজিনা বেগম বলেন, ‘প্রতিপক্ষ আমাদের ওপর হামলা করে বাড়িতে থাকা টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে। এক স্বৈরাচার খেদায়ে দেশে এ কোন স্বৈরাচার আনিছে। সাধারণ মানুষজন নিরিবিলি থাকতি পারতিছে না।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ সালামের লোক মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ইমরান, কামরান, মাহবুব, মাসুমসহ স্থানীয়রা তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মোস্তাফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আগের দিনের ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘রুহুল মেম্বারের ভাই আওয়ামী লীগের ক্যাডার শেখ রেজাউল করিম রেজার নেতৃত্বে সোমবার রাতে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালিয় আমাদের ৫ নেতাকর্মীকে আহত করে। এসময় তারা আমাদের ৫টি মোটরসাইকেল এবং একটি অটো গাড়িসহ একটি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে।’

মোস্তাফিজুর রহমান গ্রুপের নেতা বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মাসুম মোল্লা বলেন, ‘সোমবার রাতে ভাঙচুর করা মোটরসাইকেল নিয়ে আজ ( বুধবার) দুপুরে থানায় যাচ্ছিল আমার ভাই মামুন মোল্লা। তখন রুহুল মেম্বরের লোকজন তার ওপর হামলা করে। আমরা তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছিলাম। এরই মধ্যে বিকেলে আমার আরেক ভাই মাহমুদ মোল্লাকে কুপিয়ে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায় প্রতিপক্ষরা। সন্ধ্যার দিকে তারা ঢাল-শরকি নিয়ে আবারও বের হয়, তখন পুলিশও ছিল। এসময় আমাদের লোকজন তাদেরকে ধাওয়া করে, পরে তারা নিজেরা বাড়িতে আগুন দেয়।’

জেলা পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল আরিফ বলেন, ‘বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। গেল পরশুও মারামারি হয়েছে। এর জেরেই আজ দুইপক্ষে আবার মারামারি করেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

শেখ আবু তালেব/এটিআর


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর