Logo

সারাদেশ

যে কারণে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া-মদের বোতল ঝোলায় বিএসএফ

Icon

মাল্টিমিডিয়া করেসপন্ডেন্ট, লালমনিরহাট

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:০৭

যে কারণে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া-মদের বোতল ঝোলায় বিএসএফ

ছবি : বাংলাদেশের খবর

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় দহগ্রাম সীমান্তে শূন্যরেখায় দেড় কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সেখানে মদের বোতল ঝুলিয়ে রেখেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে দহগ্রাম সীমান্তে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লাইট ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে বিএসএফ। সীমান্তের পাশে তাবু টানানো হয়েছে। বসানো হয়েছে বিশেষ প্রহরা। এর ফলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সীমান্তে।

৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে সীমান্তের অন্যান্য জায়গার চেয়ে ভৌগলিক কারণে দহগ্রামের বাংলাদেশিদের দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কারণ দহগ্রাম ইউনিয়ন ভারতের ভেতরে অবস্থিত। ২২ বর্গকিলোমিটারের এ ভূখণ্ডে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন। ভারতের তিন বিঘা করিডোর ব্যবহার করে বাংলাদেশের দহগ্রাম ইউনিয়নে প্রবেশ করতে হয়।

রংপুর ৫১ বিজিবির সহকারী পরিচালক (এডি) আমীর খসরু বলেন, আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এখানে আমাদের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

কাঁচের বোতল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দহগ্রামে গিয়ে বাংলাদেশের খবর জানার চেষ্টা করেছে, ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সেখানে কী ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছে। দেখা গেছে, দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখার পিলারের কাছ দিয়ে চার ফুট উচ্চতায় লোহার অ্যাঙ্গেল বসিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে বিএসএফ। বুধবার এ বেড়ায় কাঁটাতারের সঙ্গে নির্দিষ্ট দূরত্বে মদের বোতল ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। সীমানা বেড়ার পাশ দিয়ে বিএসএফ সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থায় ভারী অস্ত্র নিয়ে টহল দিতে।

ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, এরকম বেড়া নতুন করে দেওয়া শুরু করেছে ভারতের বিএসএফ। আগে তো এরকম বেড়া দেয়নি। কিছু কিছু জায়গায় যেখানে বেশি একটু সমস্যা হয় সেখানে দিয়েছে। কিন্তু ইদানিং ওরা কোনো জায়গা বাদ দিচ্ছে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এ সীমান্ত থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বিজিবির ক্যাম্প রয়েছে। ফলে বিজিবির সদস্যরা এখানে আসতে বেশ সময় লাগে।

অন্যদিকে বিএসএফ সদস্যরা ২৪ ঘণ্টা ভারি অস্ত্র নিয়ে টহল দেওয়ায় কৃষকদের মাঝে ভীতি তৈরি হয়েছে। নতুন করে বেড়া দেওয়ার পর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

দহগ্রামের সরকার পাড়া গ্রামের এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় সীমানা বেড়া স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ৫ অগাস্টে সরকার পতনের পর থেকে পরিস্থিতি নানা কারণে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা তৈরি করেছে। তার বাড়ির সামনেই কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। বুধবার মদের কাচের বোতল ঝুলিয়ে দিয়েছে বিএসএফ।

ফজলুল হক নামে অপর ব্যক্তি বলেন, শান্তিভাবে তিনবিঘা করিডোর দিয়া হাট-বাজার করতে পারতেছি না। এ তারকাঁটার বেড়া দেওয়ার আগে মহিলা মানুষ ভাত নিয়ে মাঠে যাইতেছে, আমরা কাজ করতেছি। এ সময় ওরা (বিএসএফ) পিটান দিতেছে।

দহগ্রাম থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ ও বের হওয়ার একমাত্র রাস্তা তিনবিঘা করিডোর। তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকলেও গত ৫ অগাস্টের আগের তুলনায় কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, সীমান্তে শূন্যরেখার দেড়শ গজের মধ্যে বেড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু ২০১০ সালে ভারত-বাংলাদেশের চুক্তি অনুযায়ী, দহগ্রামে শূন্যরেখা বরাবর বেড়া দেওয়ার অনুমোদন পায় ভারত। এতদিন সেই বেড়া না দিলেও এখন বেড়া দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত।

তিনবিঘা করিডোর এলাকায় গত মঙ্গলবার বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক ও সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। তবে সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তারা সংবাদকর্মীদের সাথে সীমান্ত এলাকার মানুষের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে বিএসএফের দাবি, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে তারা সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করছে। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির বিরাজ করছে।

বিজিবি জানায়, শুক্রবার দহগ্রাম আঙ্গরপোতা এলাকায় শূন্য লাইন বরাবর বিজিবির বাধার মুখে উভয়পক্ষে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে বিজিবি রংপুর সেক্টর কমান্ডার ও বিএসএফের জলপাইগুড়ি সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে একটি স্পট মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। ওই মিটিংয়ে রংপুর-৫১ বিজিবির অধিনায়ক এবং বিএসএফ-৬ ও বিএসএফ-৪০ এর অধিনায়কসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএসএফ জানিয়েছে যে তিনবিঘা করিডোর এলাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত দহগ্রাম আঙ্গরপোতা এলাকার সাধারণ মানুষকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে তিনবিঘা করিডোর দিয়ে যাতায়াতের জন্য ২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী বিএসএফ ভারতীয় লোকজনের সহায়তায় দহগ্রাম এলাকায় শূন্য লাইন বরাবর চার ফুট উচ্চতার এক সারি বিশিষ্ট কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করবে। ফলে বিএসএফ শ্রমিকদের নিয়ে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু করে।

সূত্র আরও জানায়, সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের ওই বৈঠকে উভয়পক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী সময়ে উভয়দেশের ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক সরেজমিনে যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে কর্মপন্থা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সকল ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকবে।

রংপুর-৫১ বিজিবির সহকারী পরিচালক (এডি) পরিচালক আমীর খসরু বলেন, আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এখানে আমাদের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে বিএসএফ এখান থেকে সরে গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি রাতে পাটগ্রাম উপজেলার ধবলসুতি সীমান্তে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করে বিএসএফ। পরে বিজিবির বাধার মুখে সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়। তারও আগে গত ১ জানুয়ারি পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়া সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা করলে বিজিবির প্রতিবাদ ও বাধার মুখে সেখান থেকেও ফেরত যায় বিএসএফ। 

রাহেবুল ইসলাম টিটুল/এমবি

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর