২৫০০ টাকার চাকরি ছেড়ে মুয়াজ্জিন এখন সফল উদ্যোক্তা
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:২৬
ছবি : বাংলাদেশের খবর
২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনের মুয়াজ্জিনের চাকরি ছেড়ে এখন প্রতি মাসে আয় করছেন প্রায় ৫০ হাজার টাকা। হাফেজ আনিসুর রহমান নিজের পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস ও ভিন্ন কিছু করার প্রবল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করে হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।
কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার বেলঘর উত্তর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ছেলে আনিসুর রহমান। বাবা মাওলানা আবদুল হক শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আনিস বড়।
২০০৪ সালে চৌদ্দগ্রাম জামেয়া ইসলামিয়া নারানকরা মাদরাসা থেকে হেফজ সম্পন্ন করার পর বরিশালের হামিয়ুসসুন্নাহ কওমিয়া মাদরাসায় জামাতে নাহবেমীর পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তবে সংসারের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হয়ে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন।
এরপর আফতাব উদ্দিন মসজিদে মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে মুয়াজ্জিনের চাকরি করেন। পরে রাজগঞ্জ শুহাদায় মসজিদে ৪ হাজার টাকা বেতনে দীর্ঘ ৯ বছর মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করেন।
মুয়াজ্জিনের স্বল্প বেতনে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হওয়ায় হাফেজ আনিস সিদ্ধান্ত নেন ভিন্ন কিছু করার। একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করেন নিজের উদ্যোগ। ধীরে ধীরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘আল ইহসান পাঞ্জাবি টেইলার্স’।
আজ তার প্রতিষ্ঠান শুধু নিজেকে সচ্ছল নয়, অন্যদেরও স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছে। বর্তমানে সেখানে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। তার তৈরি পাঞ্জাবি ও জামার চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশে।
আনিসুর রহমানের ছোটভাই তাওহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পরিবার একসময় খুব কষ্টে ছিল। বড়ভাই অনেক পরিশ্রম করে এ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। আমি এখন তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছি। সংসারের অভাব অনেকটা কমেছে।’
আনিসুর রহমান বলেন, ‘জীবনে সাফল্য সহজে আসে না। প্রতিটি পথেই চ্যালেঞ্জ থাকে। সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে সাহস থাকতে হবে। এখন আমি সফল। আমার কাজের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আমার কাছে পাঞ্জাবি ও জামা অর্ডার করেন। প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ করছি।’
হাফেজ আনিসুর রহমান মনে করেন, কঠোর পরিশ্রম, আল্লাহর ওপর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস থাকলে যেকোনো চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব।
সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ/এমজে