সাগরে নিষিদ্ধ ট্রলিং বোট, ধ্বংস হচ্ছে মাছের আবাসস্থল
কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪১
বঙ্গোপসাগরে দিন দিন বেড়ে চলেছে মাছ ধরার অনুমোদনহীন নৌযান ট্রলিং বোট। এসব নৌযানে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করায় মারা যাচ্ছে সব প্রজাতির মাছের পোনা। যার ফলে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গবেষকরা বলেন, অগভীর সমুদ্রে ট্রলিং বোট দিয়ে মাছ শিকার করায় ধ্বংস হচ্ছে মাছের আবাসস্থল। এতে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের সকল মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা। অনুমোদনহীন নৌযান ট্রলিং বোটের মাধ্যমে মাছ শিকার করায় কমে যাচ্ছে উৎপাদন।
মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, সমুদ্রে মাছ শিকার শেষে শিববাড়িয়া নদীর বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে রয়েছে নিষিদ্ধ ট্রলিং বোর্ড। এসব নৌযানে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা হয়। প্রতিটি বোটেই রয়েছে নিষিদ্ধ জালে ভরা।
মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, ট্রলিং বোটের মাধ্যমে নির্বিচারে মাছ শিকার করায় সমুদ্রে মাছের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে মৎস্য আহরণে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে মাছ শূন্য হয়ে পড়বে সমুদ্র। ট্রলিং বোট ব্যবসায়ীরা সংখ্যায় কম হলেও ক্ষতি হচ্ছে অনেক বেশী। মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর বহিরাগতসহ ট্রলিং ব্যবসায়ীর সংখ্যা রয়েছে ৫০ থেকে ৬০টি। কিন্তু এ অঞ্চলে লম্বাজাল, খুটাজাল, ছান্দিজালের মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে কয়েক হাজার।
নীতিমালা অনুযায়ী, ৪০ মিটার গভীরতার কম পানিতে মাছ শিকার করতে পারবে না ট্রলিং বোট। কিন্তু এর তোয়াক্কা না করেই বঙ্গোপসাগরে ট্রলিং বোট দিয়ে মাছ শিকার করায় সরকারের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির সকল পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। নিষিদ্ধ ট্রলিং বোট নিয়ে বিপাকে পড়ছে মৎস্য বিভাগও।
সমুদ্রে দাপিয়ে বেড়ানো ট্রলিং বোটগুলোর মধ্যে আলীপুর-মহিপুরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি এবং বহিরাগত বোট রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫টি। এছাড়া পাথরঘাটা-বরগুনায় রয়েছে ৫৫ থেকে ৬৫টি। এছাড়াও রয়েছে সারাদেশে শতশত অনুমোদনহীন নৌযান ট্রলিং বোট।
খাজুরা এলাকার জেলে ছিদ্দিক ফকির বলেন, যেসব জেলেরা বৈধ প্রক্রিয়ায় সমুদ্রে মাছ শিকার করে, তারা মাছ না পাওয়ায় দিন দিন লোকসানে পড়ছে। এজন্য দায়ী ট্রলিং বোট। এসব বোট বন্ধ করতে না পারলে সমুদ্র মাছ শূন্য হয়ে পড়বে। বিশেষ করে হাজার হাজার সাধারণ জেলে কর্মহীন হয়ে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
আবু হানিফ খান বলেন, ট্রলিং বোট দিয়ে নির্বিচারে মাছ ধরায় এখন সমুদ্রে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যান্ত্রিক এ পদ্ধতির মাধ্যমে সব প্রজাতির এবং সব আকৃতির মাছ ধরা হচ্ছে। তারপর বড় মাছগুলো রেখে দিয়ে ছোট মাছ মেরে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তাই ছোট মাছ বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এর ফলে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সরকার যে নিষেধাজ্ঞাগুলো দিচ্ছে তা কোনো কাজে আসছে না।
মৎস্যজীবী দল মহিপুর থানা শাখার সভাপতি মো. আফজাল মোল্লা বলেন, ট্রলিং বোট দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার করায় সমুদ্রে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি এ বোটের অযাচিত ব্যবহার মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করছে। এর ফলে মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সাগরে মাছ না পেয়ে সাধারণ জেলে চুরি ডাকাতিসহ খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই মাছের উৎপাদন ও আহরণ স্বাভাবিক রাখতে ট্রলিং বোট দ্রুত বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ট্রলিং এর নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মাছ ধরায় আমি বোট মালিকদের নোটিশ দিয়েছিলাম। তারা আমার নোটিশ নিয়ে সমুদ্রে মাছ শিকার করার আবেদন জানিয়ে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেছেন। এ কারণে আমরা ট্রলিং বন্ধের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তারপরও আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। সচেতনতার জন্য মাইকিং করেছি, বিভিন্ন সভা সেমিনার করেছি। তবে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আশা করছি, খুব শীঘ্রই রিট আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। তারপর আমরা পুরোদমে ট্রলিং বন্ধের জন্য অভিযান শুরু করবো।
জাকারিয়া জাহিদ/এমবি