ছবি : বাংলাদেশের খবর
বরগুনার বুকচিরে বয়ে যাওয়া খাকদোন নদীতে নৌকা বেয়ে জীবনযুদ্ধে লড়াই করছেন লিলি আক্তার (৩৫)। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নৌকা চালিয়ে নিজের পরিবারকে টিকিয়ে রাখা এই সংগ্রামী নারীর জীবন যেন এক চলমান অনুপ্রেরণার গল্প।
লিলি বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া গ্রামের মৃত ফটিক উদ্দিনের মেয়ে। বাবার হাত ধরে মাত্র ১০ বছর বয়সেই নৌকা চালানো শিখেছিলেন তিনি। তখন থেকেই হয়ে ওঠেন মাঝি। তবে ২০০৭ সালের প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে বাবাকে হারিয়ে পুরো সংসারের দায়িত্ব চলে আসে তার কাঁধে।
বাবার নৌকা থেকে জীবনের পথে
বাবার রেখে যাওয়া নৌকাটি ছিল লিলির একমাত্র ভরসা। সেই নৌকা নিয়েই তিনি নেমে পড়েন খাকদোন নদীতে যাত্রী পারাপারের কাজে। ঢলুয়া থেকে ফুলতলা পর্যন্ত যাত্রী পারাপারে জনপ্রতি ভাড়া মাত্র ৫ টাকা। দিনের শেষে আয় হয় ৩০০-৪০০ টাকা। এই সামান্য উপার্জনেই লিলির সংসার চলে। বৃদ্ধা মা এবং তিন মেয়ের জন্য তার এই ত্যাগ সত্যিই বিরল।
লিলি বলেন, ‘সারাদিন নৌকা চালিয়ে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। দিনে ৩০০/৪০০ টাকা পাই। এদিয়ে সংসার চালাবো নাকি অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করাব। দিনে ১০-১১ ঘণ্টা নৌকা বাইতে বাইতে হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। এই হাতে এখন আর অন্য কোন কাজ করতে পারি না ‘
নদীপাড়েই বসতঘর
থাকার জন্য কোনো জায়গা না পেয়ে খাকদোন নদীর পাড়ে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে মা আর মেয়েদের নিয়ে থাকেন লিলি। সেখানে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাটছে তাদের দিন। লিলি একসময় বিয়ে করেছিলেন। ধার-দেনা করে স্বামীর জন্য বিষখালী নদীতে মাছ ধরার জাল আর নৌকা কিনে দিলেও সেই নৌকা বিক্রি হয়ে যায় দেনার দায়ে। এরপর থেকে পুরো পরিবারের ভার একাই বহন করে চলেছেন তিনি।
ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর একটি ঘর
অসহায় সুরে লিলি বলেন,‘নৌকায় যদি একটা ইঞ্জিন লাগানো যেত, তাহলে আর এত কষ্ট হত না।’ তার ইচ্ছা, কেউ যদি তাকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা আর থাকার মতো একটি ঘর দিতে পারত, তাহলে তার জীবনটা একটু সহজ হতো।
নজিরবিহীন সংগ্রাম
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা লিলির বিষয়ে বলেন, ‘নারীর নৌকা চালানোর বিষয়টি নজিরবিহীন। আমরা তাকে সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাব।’
লিলিকে সাহায্য করার জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এটিআর/