Logo

সারাদেশ

‘রিজেন্ট পার্ক কর্তৃপক্ষকে মামলা করতে এসএমপি কমিশনারের চাপ’

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক, সিলেট

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:০৫

‘রিজেন্ট পার্ক কর্তৃপক্ষকে মামলা করতে এসএমপি কমিশনারের চাপ’

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানাধীন সিলাম রিজেন্ট পার্ক ও রিসোর্টে হামলা এবং ভাঙচুরের অভিযোগে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

তবে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) তিনি সিলামের ৯ নং ওয়ার্ডবাসী আয়োজিত পরামর্শ সভায় বলেছেন, মামলা করতে পুলিশ তাকে বাধ্য করেছে। তিনি মামলা করতে আগ্রহী ছিলেন না। এমনকি মামলায় আসামিদের নামও পুলিশ দিয়েছে। আসামিদের তিনি চিনেন না।

এছাড়া সভায় হেলাল উদ্দিন রিজেন্ট পার্কে আর রিসোর্ট ব্যবসা করবেন না বলেও স্থানীয়দের প্রতিশ্রুতি দেন।

গত রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে রিজেন্ট পার্ক ও রিসোর্ট ঘেরাও করে অসামাজিক কার্যকলাপরত অবস্থায় ২৪ জন ছেয়ে-মেয়েকে আটক করেন স্থানীয়রা। এর মধ্যে ৮ জন সেখান থেকে সটকে পড়েন। পরে ৮ জনকে পুলিশ ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিয়ে দেন স্থানীয় মুরুব্বিরা এবং বাকি ৮ জনকে পরিবারের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে পড়ান সিলাম ইউনিয়নের কাজী আব্দুল বারী। বিবাহিতদের মধ্যে তিন যুগলের ১০ লাখ করে এবং এক যুগলের ১২ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়।

বিয়ে দেওয়া ৮ তরুণ-তরুণী সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর উপজেলার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

এদিকে, এই ২৪ জন ছেলে-মেয়েকে আটকের সময় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা ‘দীর্ঘদিন ধরে রিজেন্ট পার্ক ও রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে’— এমন অভিযোগ তুলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পরে স্থানীয় মুরুব্বি ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে।

এ ঘটনার পর ফেসবুকে বিভিন্নজন মন্তব্য করতে থাকেন,‘চাঁদা না পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজরুল ইসলাম তাজুলের নেতৃত্বে রিসোর্টটিতে পরিকল্পিতভাবে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।’ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যম সংবাদও প্রকাশ করে। 

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাত ৮টায় সিলাম শাহী ঈদগাহে স্থানীয়দের উদ্যোগে পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন, রিজেন্ট পার্ক ও রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল উদ্দিন এবং স্বত্বাধিকারী আব্দুল মুমিত চৌধুরী মঞ্জু’র প্রতিনিধি পুলিশের সাবেক ইন্সপেক্টর অঞ্জন কুমার পালসহ সিলাম ইউনিয়নের গণ্যমান্য সর্বস্তরের জনতা।

পরামর্শসভায় বক্তব্যকালে হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মামলা করতে আগ্রহী ছিলাম না। এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্য ছিল আমাদের। কিন্তু আমাকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে মামলা দায়ের করার জন্য চাপ দেন। আমি তখন বলেছিলাম, বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধান হবে। তখন তিনি আমাকে বলেন, মামলা দায়েরের পরও এটা করতে পারবেন। এছাড়া মোগলাবাজার থানার ওসি ফোন করেও আমাকে বার বার মামলা দায়েরের জন্য বলেন। তাই বাধ্য হয়ে আমি মামলা দায়ের করি। তবে মামলায় আমি কোনো আসামির নাম দিইনি। আসামিদের আমি চিনি না, পুলিশ-ই নিজ থেকে আসামিদের নাম দিয়েছে।’

হেলাল উদ্দিন তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমি কখনো কোনো পত্রিকা বা সংবাদমাধ্যমে বলিনি যে, বিএনপিনেতা তাজুল আমার কাছে চাঁদা চেয়েছেন। এটা অতিরঞ্জিত করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তাছাড়া ঘটনার দিন বিএনপিনেতা তাজুল আমাকে অনেকভাবে সহযোগিতা করেছেন। ফেরার পথে আমাকে নিরাপদে চন্ডিপুল পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন। তার চাঁদা দাবির বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মুমিত চৌধুরী মঞ্জু’র প্রতিনিধি পুলিশের ইন্সপেক্টর অঞ্জন কুমার পাল বলেন, ‘তিনি (মঞ্জু) অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি, তার কাছের মানুষ হিসেবে আমাকে পাঠিয়েছেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে আমরা সম্পূর্ণ একমত। এ রিসোর্টে কোনো অসামাজিক কাজ হতে পারে না। এতে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হবে। অসামাজিক কাজ যাতে আর না হয় সে ব্যাপারে আমরা পদক্ষেপ নেব।’

তিনি মোগলাবাজার থানার বর্তমান ওসির সমালোচনা করে বলেন, ‘ওসি সাহেবের উচিৎ ছিল ঘটনার পরদিনই এলাকার মানুষকে নিয়ে বৈঠক করে শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টির সমাধান করা। কিন্তু তিনি তা না করে রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে বার বার মামলা করার জন্য চাপ দিয়েছেন। এটি অনুচিত।’

এদিকে, সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলে অসামাজিক কার্যকলাপবিরোধী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে। পরে সেখান থেকে একটি প্রতিনিধি দল মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে এসএমপি কমিশনারের কাছে যাবে এবং স্মারকলিপি প্রদান করবে।

এজাহারে আসামিদের নামোল্লেখের বিষয়ে মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আমাদের মিডিয়া স্যার বক্তব্য দেবেন।’

এসএমপি’র মিডিয়া অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভিকটিম ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে আসছেন যে, তিনি মামলা করবেন। পরবর্তীতে তিনি মামলা করেছেনও। ভিকটিম নিজে থেকে মামলা করতে না চাইলে আমরা কেন বাধ্য করব? আর মামলার এজাহার বাদী যেভাবে লিখে দিয়েছেন সেভাবেই পুলিশ রেকর্ড করেছে। এখানে পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই।’

মামলা দায়েরে ‘চাপ সৃষ্টি’র বিষয়ে এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা) বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘মামলা দায়ের একটি আইনি প্রক্রিয়া। একটা জায়গায় বিশৃঙ্খলা হয়েছে, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ হয়েছে, সেটি তো পুলিশই দেখবে। আমরা ভিকটিমকে আইনি সাপোর্ট দেওয়ার জন্যই মামলা দেওয়ার জন্য বলেছি, এটি অনুচিত নয়।’

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার মোগলাবাজার থানায় হেলাল উদ্দিনের দায়েরকৃত মামলার (নং-৭)এজাহারে ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২৫০-৩০০ জনকে। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ, ছাত্রদলকর্মী আলাউদ্দিন ফারাবি, সানোয়ার বখত রাহিন, হুসাইন আহমদ, কবির আহমদ ও সুমন আহমদ। এর মধ্যে আবু সালেহ প্রধান আসামি।

রেজাউল হক ডালিম/এটিআর


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর