
ছবি : বাংলাদেশের খবর
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের বদর মোকাম খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি গত বন্যায় ধসে পড়ে। এর ফলে সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ থেকে দাসের হাট- চরদরবেশ কেরামতিয়া-বগাদানা কাজিরহাট সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এই সড়কের হাজার হাজার বাসিন্দা এখন বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে এলজিইডি কর্তৃক খালের ওপর ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে ৩০ মিটারের একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের কথা থাকলেও দীর্ঘ ৬ মাসেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজটি মূল সড়ক থেকে হেলে খালের পানিতে অর্ধেক ডুবে আছে। ফলে ব্রিজের পাশে তৈরি সাঁকোতেই ঝুঁকি নিয়ে খাল পারাপার হচেছন স্থানীয়রা।
তারা জানান, গত ২৪শে আগস্ট বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ব্রিজের উত্তর পাশের মাটি সরে যায়। ২৬ আগস্ট মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার পর ফেনী নদী থেকে সরাসরি জোয়ারের পানি খালে প্রবেশ করলে ব্রিজটির দক্ষিণ পাশ থেকেও মাটি সরে যায়। ফলে ব্রিজটি খালে ধসে পড়ে। এতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় চরদরবেশ ইউনিয়ন ও বগাদানা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী গ্রামের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন।
তারা বলেন, প্রতিদিন বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগে এবং যাত্রীদেরকে দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হয়। এছাড়া ব্রিজ না থাকায় চর সাহাভিকারী গ্রামের বাগিসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসার অনেক ছাত্রছাত্রী পাঠশালায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে ব্রিজ ধসে যাওয়ার সময় উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সড়কটি পরিদর্শন করলেও পরে তাদেরকে আর দেখা যায়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় মাইনুল ইসলাম বলেন, ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ চলাচলে অনেক কষ্ট করছে। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ব্রিজের অভাবে ঠিকমত স্কুলে যেতে পারছে না। তারা ঝুলন্ত সাঁকোর ওপর দিয়ে স্কুলে যেতে ভয় পায়। গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। অতি দ্রুত ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান তিনি।
কাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন মামুন বলেন, বদর মোকাম খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি গেল বন্যায় ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এতে জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। ব্রিজ ভাঙার প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংস্কার কাজে এগিয়ে না আসা খুবই দুঃখজনক।
ইমন নামের এক গাড়ি চালক বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় নদীতে অতিরিক্ত জোয়ার ভাটার কারণে নদীর পাড় ভেঙ্গে জনপদ বিলীন হচ্ছে। মানুষের ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, পোল কালভার্ট কিছুই রক্ষা করা যাচ্ছে না। সরকারের এ বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) সোনাগাজী উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হুদা বাংলাদেশের খবরকে জানান, বদর মোকাম খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি এলজিইডি করেনি। ব্রিজটি ২৫ বছর আগে নির্মাণ করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। তখন এ ব্রিজটি পাইল ফাউন্ডেশন দিয়ে করা হয়নি। ব্রিক পিলারের ওপর আরসিসি গার্ডার দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। তাই বন্যার সময় পানির তীব্র স্রোতে পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটি সম্পূর্ণ ধসে পড়ে। বন্যার পরে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলসহ আরও অন্যান্য প্রতিনিধি দল ব্রিজের ভাঙ্গন স্থান পরিদর্শন করে গেছেন।
সোনাগাজী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের মোজাহিদ বলেন, জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল অব্যাহত রাখার জন্য এলজিইডি কর্তৃক ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে ৩০ মিটারের একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণের প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজের অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
এমরার পাটোয়ারী/এটিআর