জাবিতে সাংবাদিকসহ দুজনকে মারধর, ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৪
-67a662b34f561.jpg)
মারধরে আহত দুজন।
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় সাংবাদিকসহ দুজনকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে আশুলিয়া থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আহতরা হলেন, শামীম হাসান সীমান্ত (৩০) ও আমিনুল ইসলাম (৪০)। শামীম হাসান সীমান্ত সাভারের আশুলিয়ার ডেন্ডাবর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তিনি রাজবাড়ীর কালুখালি থানার সিকজান এলাকার বাসিন্দা ও বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভির আশুলিয়া সংবাদদাতা হিসেবে কর্মরত। আহত আমিনুল ইসলাম সাভারের আশুলিয়ার বাসিন্দা। তিনি একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক হিসেবে কর্মরত।
এ ঘটনায় সোহেল রানা (৪২), মো. সিদ্দিক (৪৫), আল মামুন খান (৪৮), মো. ফয়জুল ইসলাম (৪০), মো. ইমদাদুল হক (৪০), মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সাগর (৪২)-কে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আসামিরা সাভারের আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকার এলাকার বাসিন্দা। এর মধ্যে সোহেল রানা দৈনিক বণিক বার্তার প্রতিবেদক। তিনি একাধিক মামলার আসামি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, পেশাগত দায়িত্ব পালনে শামীম ৬ ফেব্রুয়ারি জাবিতে যান। জাবির ভেতরে প্রবেশ করার সময় সেখানে উপস্থিত থাকা সোহেল রানা তাকে কথা আছে বলে ডাকেন। তিনি কাজ শেষে দেখা করার কথা জানালে তার সঙ্গে থাকা সঙ্গীকে রেখে যেতে বলেন অভিযুক্ত সোহেল রানা।
বিষয়টি না মানলে প্রথমে সঙ্গী ওই ব্যক্তিকে ও পরে শামীমকেও বেধড়ক মারধর করতে থাকেন অভিযুক্ত ও তার সঙ্গীরা। এতে তাদের শরীরে রক্তাক্ত জখম হয়। অভিযুক্ত সোহেল রানার হাতের লাঠির আঘাতে আমিনুল ইসলামের মাথা রক্তাক্ত জখম হয়।
একপর্যায়ে আহত দুজনকে টানতে টানতে পাশেই তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায় অভিযুক্তরা। সেখানেও তাদের মারধর করা হয়। পরে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করেন। গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত আমিনুল ইসলামকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
শামীম হাসান সীমান্ত বলেন, ‘পেশাগত কারণে আমি জাবিতে যাই। আমার সঙ্গে একজন অতিথি ছিলেন। ওই সময় সোহেল রানা আমাকে ডাকেন। আমি তাকে বলি কাজ শেষ করে এসে দেখা করছি। তখন সে বলে তোর গেস্টকে রেখে যা। তখনই বলে, তুই নাম। ওরে রেখে যা।’
‘তখন আমার গেস্ট সোহেল রানাকে বলে, আমাদের যেতে দেন, আর আমাকে রাখবে কেন? আমাদের ছেড়ে দেন। এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে দুইটা থাপ্পড় দেয় ও একপর্যায়ে তাকে কিল-ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। তাকে মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে। আর বলে, সে চুপ্পুর ভাতিজা। তার মাথায় লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় আমাকেও সোহেল রানা, সিদ্দিক, ফয়জুল, আল মামুন খান, সিদ্দিক, ইমদাদসহ কয়েক আমাকেও মারধর করে।’
তিনি বলেন, ‘এরপর আমাদের জাবি মার্কেটে তাদের অফিসে নিয়ে সেখানেও প্রায় ২ ঘণ্টা মারধর করে। তারা আমাকে স্বৈরাচারের দোসর বলে এলাকা থেকে চলে যেতে বলে, না-হয় তাড়িয়ে দেবে- এসব বলতে থাকে। সোহেল রানা বিভিন্ন জিনিস দিয়েও আমার শরীরে আঘাত করে।’
পোশাক কারখানার শ্রমিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শামীমের সঙ্গে জাবিতে যাই। ভেতরে ঢুকব বলে রিকশায় উঠি। তখন পাশে বসা ওই ব্যক্তিরা আমার সঙ্গে থাকা শামীমকে ডাক দেন। একপর্যায়ে তাকে বলেন, তোমার সঙ্গের জনকে রেখে যাও। তখন শামীম বলেন, উনিসহ কাজ আছে, কীভাবে রেখে যাব।’
‘এরপরও রেখে যেতে বলে ওই ভাইয়ের ওপর তারা প্রথম চড়াও হয়। আমি থামতে বললে, একজন আমাকে কলার ধরে গালি দিয়ে বলে, ‘তোর বাড়ি পাবনা না? তুই চুপ্পুর ভাতিজা’ বলেই দুইজন মিলে কিল-ঘুষিসহ মারধর করে। আমার সঙ্গে থাকা ওই ভাইকেও আরও ৩-৪ জন মিলে কিল-ঘুষিসহ বিভিন্নভাবে মারতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করতে থাকে। একপর্যায়ে আমাদের ধরে জাবির বাইরে নিয়ে সামনের মার্কেটে একটা অফিসে নিয়ে যায়। আমি তাদের বারবার বলি আমি চাকরি করি। একপর্যায়ে মারতে মারতে মাথায় আঘাত করলে ফেটে যায়। রক্তাক্ত জখম হই। এতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। তারাই পাশ থেকে চিকিৎসক এনে আমার মুখভর্তি মেখে যাওয়া রক্ত পরিষ্কার করায়। দীর্ঘ সময় পর আমার জ্ঞান ফেরে। আমি মারধর করা কাউকে চিনিও না।’
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিক বলেন, ‘মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এই বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এমজে