
পঞ্চগড়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট দূরীকরণ ও চিকিৎসক নিয়োগে আন্দোলন ও অনশনের পর জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালে চার চিকিৎসককে পদায়ন দিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতাল চার চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে শুনেছি। আগামী রোববার বিষয়টি জানতে পারবো। যত দ্রুত তারা হাসপাতালে জয়েন করবো, আমরা রোগীদের সেবা দিতে পারবো।
পদায়ন হওয়া চিকিৎসকরা হলেন ইন্দ্রাশীষ স্যানাল, ডা.মো.শামসুল আরেফিন, দেবপ্রিয় দাস ও মৌসুমী মন্ডল। এ চার চিকিৎসকের মধ্যে ইন্দ্রাশীষ স্যানাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী রেজিস্টার (অ্যানেস্থেসিওলজি) নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পঞ্চগড় সদর আধুনিক হাসপাতালে সহকারী সার্জন/ইকুইভ্যালেন্ট হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন।
ডা. মো. শামসুল আরেফিন সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সহকারী রেজিস্ট্রার (মেডিসিন) পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এ হাসপাতালটিতে ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন।
দেবপ্রিয় দাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী রেজিস্টার (স্পাইন সার্জারি) নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি হাসপাতালটিতে সহকারী সার্জন হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন।
মৌসুমী মন্ডল রাজশাহীর দুর্গাপুরের নয়াপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী সার্জন (রেজিস্ট্রার-গাইনী অ্যান্ড অবস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া ইনডোর মেডিকেল অফিসার (গাইনি এন্ড অবস), রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইনডোর মেডিকেল অফিসার (গাইনি এন্ড অবস)। তিনি সহকারী সার্জন/ইকুইভ্যালেন্ট হিসেবে পদায়ন পেয়েছেন।
এর আগে গত জানুয়ারিতে মোছা. জান্নাতুন ফেরদৌস ও মো.নুর আলম নামের দুজন চিকিৎসককে পদায়ন দিয়ে জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালে সহকারী সার্জন/ ইকুইভ্যালেন্ট হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে জান্নাতুন ফেরদৌস বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন/ মেডিকেল অফিসার ও নুর আলম জেলার সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জন/ ইকুইভ্যালেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল অফিসার (এডমিন) ডা.মো.মাসুদ আলম জানান, পঞ্চগড়ের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছি। পঞ্চগড়ের চিকিৎসা সেবার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন মহোদয় খুবই আন্তরিক। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চার চিকিৎসককে পদায়ন করেছেন। গত জানুয়ারিতে দুজন চিকিৎসক এই হাসপাতালে পদায়ন হয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি ২৫০ শয্যার নতুন ভবনটি চালুর করার। বিশেষ করে পঞ্চগড়ে চিকিৎসক সংকট ও চিকিৎসক নিয়োগকরণে যারা আন্দোলন ও অনশন করেছেন, তারা যৌক্তিক দাবি নিয়ে এ এলাকার চিকিৎসাসেবা নিয়ে ভাবেন।
পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতাল চার চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে শুনেছি। আগামী রোববার বিষয়টি জানতে পারবো। যত দ্রুত তারা হাসপাতালে জয়েন করবো, আমরা রোগীদের সেবা দিতে পারবো।
প্রসঙ্গত, পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ ৪ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ১৬৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র ৪৫ জন চিকিৎসক থাকায় এবং চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে দুর্ভোগের শিকার হওয়ায় সংকট দূরীকরণের দাবিতে অনশন কর্মসূচি, মানববন্ধন হয়ে আসছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ৯ দফা দাবিতে অনশন কর্মসূচি পালন করে জেলার সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরাম। এছাড়াও গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে পঞ্চগড়ে হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগসহ পাঁচ দাবিতে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের এক পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীরা।
মানববন্ধনে তারা দাবি জানিয়েছিলেন, পঞ্চগড় দেশের সর্বোত্তরের জেলা হওয়ায় এ জেলার ১২ লাখ জনগোষ্ঠী চিকিৎসকের অভাবে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত। এ বিপুল জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে রেখে দেশের উন্নয়ন ও সংস্কার সম্ভব নয়। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ৩৭ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ১১ জন। এ ছাড়া জেলার অন্য চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ২৬ জন। এতে পঞ্চগড়ের মানুষ চিকিৎসাসেবায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
এছাড়া এ জেলার কেউ হৃদরোগ, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণসহ ছোটখাটো দুর্ঘটনায় পড়লে হাসপাতালে যাওয়া মাত্রই রংপুর বা দিনাজপুরে পাঠানো হয়। এতে অনেক রোগীই পথে মারা যাচ্ছেন। টাকাপয়সার অভাবে অনেক রোগী বাইরে যেতে না পারায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে। জেলা শহরের ১০০ শয্যার হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে সেটি চালু হচ্ছে না। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাঁদের দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
এসকে দোয়েল/এমএইচএস