বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিতে ‘ছাত্রলীগ পুনর্বাসন’

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:০০
-67b324d6d801a.jpg)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ঠাঁই দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া কমিটি গঠনের আগে নেওয়া হয়নি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীদের মতামত নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এ কমিটির অনুমোদন দেন। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কমিটি প্রকাশ করা হয়।
তবে কমিটি প্রকাশের পরই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় থাকা সিলেটের নেতাকর্মীর একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সমাজমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখালেখি করছেন তারা।
এমনই ক্ষুব্ধ একজন জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সিলেটের অন্যতম সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সিলেটের আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে ময়দানে লড়াইকারীদের বড় একটা অংশকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গালিব ভাইয়ের নিজের কথামতো কাজ করবে সে যদি লীগও হয়, নন-সিলেটিও হয় তাদেরকে দিয়ে যে কমিটিতে আসার কথা, এখন দেখলাম তাই হলো।‘
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এমন একজনকে কমিটির প্রধান করে রাখা হলো, যে লীগের হয়ে ক্ষমতা চর্চা করত। যাকে আমরা কখনো জুলাই বিপ্লবে তো অংশগ্রহণ করতে দেখিনি। লীগের কিছু টোকাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে মিশে আন্দোলনের অবস্থা জানতে চেষ্টা করত, তেমন দু'একটা পিক হয়তো থাকতে পারে। এমনকি যে কালচার ফ্যাসিস্ট উদীচী আর ছায়ানটের সদস্য তিনি।’
ফয়সাল আরও লেখেন, ‘এমনকি যেই আন্দোলনের একজন অংশীজন আমি। এমনকি সিলেট থেকে যেই দুজন কেন্দ্রের ১৫৮ জনের মধ্যে আমিও একজন। আমার থেকে কোনো প্রকারের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। সুতরাং সত্যিকারের বিপ্লবী যাদের এই কমিটিতে নামমাত্র রাখা হয়েছে তারাও যেন সবার আগে এই কমিটি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে।’
কমিটি প্রত্যাখ্যানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কমিটি প্রত্যাখ্যান করলাম। বাকিটা সিলেটিদের ওপর ছেড়ে দিলাম। যারা হাসিনাকে ভয় পেয়ে চুপ ছিল না, তারা এখনো চুপ থাকবে না।’
এই পোস্টের নিচে কমেন্ট বক্সে ফয়সাল আরও মন্তব্য করেন, ‘আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে আন্দোলন পরবর্তী কাহিনিগুলো একদম স্ক্রিনশট শেয়ার দিয়ে বর্ননা দিয়ে দিয়ে লিখব।’
অসন্তোষ প্রকাশ করা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে এমসি কলেজের শিক্ষার্থী হাসান আহমদ চৌধুরী মাজেদকে মুখ্য সংগঠকের পদ দেওয়া হয়েছে। অথচ তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাকে কমিটিতে রেখে গুরুত্বপূর্ণ এই দায়িত্ব দেওয়ায় ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন ‘বিদ্রোহীরা’।
মাজেদসহ আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে বলে জুলাই-আগস্টে বিপ্লবকারী একাংশের অভিযোগ।
তাদের মূল অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরর সময় সিলেটে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী আসাদুল্লাহ আল গালিবের দিকে। গালিব কারো মতামত না নিয়ে নিজের মতো করে এই কমিটির প্রস্তাব কেন্দ্রে দিয়েছেন বলে তাদের বক্তব্য।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে আসাদুল্লাহ আল গালিবের মুঠোফোনে একাধিকার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সার্বিক বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘ফেসবুকে এমন লেখালেখি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তারপরও আমাদের কাছে অফিসিয়ালি অভিযোগ আসলে আমাদের তদন্তকাজ সহজ হতো। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে হলে কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হবে।’
গালিবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে আরিফ সোহেল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘এ বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক কমিটির শীর্ষ নেতারা হলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দেলোয়ার হোসাইন আহ্বায়ক, মদন মোহন কলেজের ছাত্র তামিম আহমেদ সদস্যসচিব, এমসি কলেজের ছাত্র হাসান আহমদ চৌধুরী মাজেদ মুখ্য সংগঠক ও মদন মোহন কলেজের ছাত্র মো. রিয়াদ হোসেন মুখপাত্র।
কমিটির ১৯ জন যুগ্ম আহ্বায়ক হলেন, মাহফুজুর রহমান সাকের, লুৎফুর রহমান, ফাহিমা আক্তার, সায়মন সাদিক জুনেদ, মুহাম্মাদ বিজয় খান, মোহাম্মদ জিয়াদ উল ইসলাম, সালমা বেগম, রুহুল আমিন, ফুয়াদ হাসান, তৈয়বুর রহমান তুহিন, আলি নেওয়াজ, মো. হালিম, আব্দুস ছামাদ সাদ্দাম, আতাহার আলী রাহাত, মো. জুবায়ের আহমদ, রেদোয়ান হোসেন শাওন, মো. জবরুল ইসলাম রায়হান ও শাহাবুদ্দিন খান।
আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম সদস্যসচিব ২৩ জন, সংগঠক ৩০ জন ও ১৭৭ জন সদস্য রয়েছেন। এই আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ ৬ মাস।
রেজাউল হক ডালিম/এমজে
প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন