Logo

সারাদেশ

সন্ধ্যা নামলেই সক্রিয় পাবনার বালুখেকো চক্র

Icon

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:০৪

সন্ধ্যা নামলেই সক্রিয় পাবনার বালুখেকো চক্র

ছবি : বাংলাদেশের খবর

দিনভর নীরবতা, আর রাত নামতেই শুরু হয় বালু উত্তোলনের মহোৎসব। প্রশাসনের নীরব ভূমিকা এবং রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় পাবনার বিভিন্ন স্থানে রাতের আঁধারে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের এ উৎসব। এতে একদিকে যেমন ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও স্থানীয় পরিবেশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এই বালু উত্তোলনের নেতৃত্ব দিলেও বর্তমানে বিএনপির নেতাকর্মীরা এই কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার বালু বিক্রি হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।  

পদ্মা নদীর পাবনার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের চর ভবানীপুর, দোগাছী ইউনিয়নের চর বলরামপুর, ভাঁড়ারা ইউনিয়নের দড়িভাউডাঙ্গা, চরতারাপুর ইউনিয়নের দিঘী গোয়ালবাড়ি, সুজানগর উপজেলার চর ভবানীপুর, বরখাপুর, উদয়পুর, হাট মালিফা, নাজিরগঞ্জ, বেড়া উপজেলার ঢালারপুর, নগরবাড়ি, চাকলা, ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী, লক্ষীকুণ্ডা—এইসব এলাকায় প্রায় ২০টি পয়েন্টে নিয়মিতভাবে বালু উত্তোলন চলছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়, কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সম্প্রতি বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। তবে, গত একসপ্তাহ ধরে আবারও তা শুরু হয়েছে। এখন দিনের বদলে রাতে তোলা হচ্ছে। আগে এইসব বালু মহলে নেতৃত্ব দিতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা, এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। প্রতিদিন একেকটি পয়েন্টে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বালু বিক্রি হয়, সবমিলিয়ে জেলায় প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার বালু বিক্রি হয়। যার বেশিভাগই চলে যায় প্রশাসন ও রাজনৈতিকসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে। দিনের বেলায় বালু উত্তোলনের নেতৃত্ব দেওয়া চেনামুখগুলো সংশ্লিষ্ট থানা ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আনাগোনা করতে দেখা যায়। আর বালুবাহী ট্রাকগুলো জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের সামনে দিয়েই বাধাহীনভাবে দাপিয়ে বেড়ায়।’

কৃষকরা বলেন, ‘আগে নদী শুকিয়ে গেলে আমরা সেখানে বাদামসহ অন্যান্য ফসল ফলাতাম। কিন্তু এখন বালু উত্তোলনের কারণে সেই সুযোগ নেই। জমি ধ্বংস হচ্ছে, রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না, উল্টো আমাদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।’

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমেই জানলাম। এছাড়া অন্য কয়েকটি সূত্র থেকেও শুনেছি, রাতের বেলায় বিভিন্ন জায়গায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। আমরা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বিষয়টি জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’  

অন্যদিকে পাবনা পুলিশ সুপার মোরতোজা আলী খান প্রশাসনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘এটি লোকজনের বক্তব্য মাত্র। আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। তবে জেলা প্রশাসক ও নৌপুলিশের মূল দায়িত্ব এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। অভিযানের জন্য ডিসি অফিস থেকে যদি আমাদের সহযোগিতা চায়, তাহলে আমরা যথাযথ ফোর্স দেব।’

এসএস কামাল/এটিআর


Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর