রং-তুলির আঁচড়ে বাংলা ভাষার প্রতি ব্রিটিশ নারীর শ্রদ্ধা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:৩৪
-67b88f0fa877d.jpg)
ছবি : বাংলাদেশের খবর
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ব্রিটিশ নাগরিক প্যাট্রিসিয়া অ্যান ভিভিয়ান কার। ব্রিটিশ এই নারী রং-তুলির আঁচড়ে নিজ হাতে লিখেছেন বাংলা বর্ণমালা অ, আ, ক, খ।
ব্রিটিশ নারী প্যাট্রিসিয়া অ্যান আলপনা অঙ্কনের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। সম্মান জানিয়েছেন বাংলা ভাষাকে। তার অম্লান ভালোবাসা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর। এ জন্য তিনি বাংলা ভাষা শিখেছেন বলে জানিয়েছেন।
প্যাট্রিসিয়া অ্যান ভিভিয়ান কারের (৮০) বাবার নাম হ্যারাল্ড রবার্ট কার। তিনি ইংল্যান্ডের ওয়েলস প্রদেশের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নে শিশুপল্লি প্লাস নামে শিশু ও মায়ের আশ্রয় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি করেন। বর্তমানে এখানে প্রায় ৪০০ মা ও শিশু রয়েছে।
ব্রিটিশ নাগরিক প্যাট্রিসিয়া বলেন, ‘বাংলা ভাষার প্রতি আলাদা আগ্রহ নিয়ে শিশুপল্লি প্লাসের শিশুদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনা ধারণ করতে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকি। এখানের অনাথ শিশুরা যাতে তাদের নিজস্ব চেতনা ধারণ করতে পারে। বাংলা ভাষার প্রতি আমার দরদ প্রকাশের মাধ্যম এটি বলতে পারেন। শিশুদের নিয়ে বাংলা বর্ণমালা শিখছি, লিখছি। বিভিন্ন ধরনের চিত্রাঙ্কনে অংশ নিয়েছে শিশুরা। আমিও শিশুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি।’
জানা গেছে, ব্রিটিশ নাগরিক প্যাট্রিসিয়া অ্যান ভিভিয়ান কারের বাবা বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সুবাদে শখের বশে বিমানবাহিনীর ক্রু হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। এরপর থেকে শুরু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাতায়াত। ১৯৮৬ সালে একটি ফ্লাইট দুদিন বিলম্ব হয়। এমন খবর নিশ্চিত হয়ে প্যাট্রিসিয়া অ্যান ভিভিয়ান কার বেরিয়ে পড়েন ঢাকা শহর ঘুরে দেখতে।
হঠাৎ তার চোখে পড়ে ফ্যামিলি ফোর চিলড্রেন লিখা একটি সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডটি ঢাকার ফার্মগেট এলাকায়। ভেতরে প্রবেশ করে অনাথ শিশুদের সঙ্গে তার কথা হয় দীর্ঘ সময়। তাদের সুযোগ-সুবিধার কথা জানতে চান কর্তৃপক্ষের কাছে। এরপর থেকে এসব অনাথ এতিম আশ্রয়হীন শিশুর জন্য কিছু করার ইচ্ছা মনের ভেতর পুষেন তিনি। এরপর নিজ দেশে গিয়ে তাঁর স্বজন ও বন্ধুদের কাছে তাদের বিষয়ে জানিয়ে সহযোগিতা চান।
এভাবেই শিশুদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে সহায়তার হাত বাড়ান এই ব্রিটিশ নারী। অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতে থাকেন ফ্যামিলি ফোর চিলড্রেন নামে প্রতিষ্ঠানকে। তাতেও তিনি তেমনভাবে মনে প্রশান্তি না পেয়ে নিজেই অনাথ এতিম আশ্রয়হীন শিশুদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। এরপর ফ্যামিলি ফোর চিলড্রেনের কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গাজীপুরের শ্রীপুর তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামে ১৯৮৯ সালে ১৭ একর জমির ওপর নির্মাণ করেন বিশাল শিশুপল্লি প্লাস নামে শিশু ও মায়ের আশ্রয় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারা দেশের হাজার হাজার অনাথ এতিম আশ্রয়হীন শিশু ও মায়ের লেখাপড়া, কারিগরি শিক্ষা, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয় এই প্রতিষ্ঠানে। সমাজের অনাথ এতিম আশ্রয়হীন শিশু এবং স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের আশ্রয়স্থল একমাত্র ঠিকানা হয়ে ওঠে শিশুপল্লি প্লাস। মানবসেবায় তার হাতকে আরও বেশি প্রসারিত করতে থাকেন ব্রিটিশ নারী প্যাট্রিসিয়া অ্যান ভিভিয়ান কার। এভাবেই অনাথ শিশু ও নারীদের জন্য আলোর পথ দেখানোর স্বপ্নের সারথি হয়ে ওঠেন এই ব্রিটিশ নাগরিক। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব লাভ করেন ব্রিটিশ নাগরিক প্যাট্রিসিয়া অ্যান ভিভিয়ান কার।
শিশুপল্লি প্লাসের রেসিডেন্ট আর্টিস্ট মিলন রব জানান, শিশুপল্লি প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিসিয়ার বাংলা ভাষার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা রয়েছে। সেজন্য শিশুদের সঙ্গে মিশে অল্প অল্প করে বাংলা ভাষা শিখেছেন তিনি। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সকল আচার-অনুষ্ঠানে নিজে অংশ নিয়েছেন। রং তুলিতে লিখেছেন আমাদের বাংলা বর্ণমালা।