Logo

সারাদেশ

নারায়ণগঞ্জে ‘ওসমানের পোদ্দারি’

Icon

সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৫, ১৪:১৩

নারায়ণগঞ্জে ‘ওসমানের পোদ্দারি’

অভিযুক্ত ওসমান গণি। ছবি : বাংলাদেশের খবর

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার সানারপারসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে একে একে বের হয়ে আসছে ওসমান গণির ভূমিদস্যুতার অসংখ্য অভিযোগ।

এলাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, জমি, অর্থ-বিত্ত আর সম্পদে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন ভূমিদস্যু মাফিয়া ওসমান গণি।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন তিনি।  জমি দখল, কমিশন বাণিজ্য, তদবিরবাজি, ভুয়া দলিল তৈরি থেকে শুরু করে প্রতারণা-জালিয়াতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেন ভূমিদস্যু নামে পরিচিত ওসমান গণি ও তার ছেলে ইমরান।

গত (৫ মার্চ) সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকা থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় ওসমান গণিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।  হত্যা চেষ্টা, জমিদখল, জাল দলিল তৈরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে ওসমান গণির বিরুদ্ধে।  তবে থেমে নেই তার অপকর্ম, ভূমিদস্যুতা এলাকায় এখনো আতঙ্কে কেঁপে কেঁপে উঠছে ভুক্তভোগী ও ওসমান গনীর নির্যাতনের শিকার মানুষেরা।

পরিসংখ্যান ও অনুসন্ধান বলছে, অঢেল অর্থ সম্পদ ও জবরদখল কৃত জমির মালিক তিনি। এ অবৈধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে গড়ে তোলেন বিশাল সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক।  আওয়ামী লীগে তার কোনো পদ না থাকলেও সকল মিছিল-মিটিংয়ে সক্রিয় ছিলেন ওসমান।  বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে রাজনৈতিক পরিচয়ে হয়ে ওঠেন প্রভাবশালী দখলবাজ।  আওয়ামী লীগের শাসনামলে অর্থের প্রভাবে প্রশাসনকেও কিনে রেখেছিলেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘কেঁচো খুঁড়তে যেন সাপ’ বের হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। উঠে এসেছে তার অপকর্মের ভয়ংকর ফিরিস্তি। সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলার সানারপার, উত্তর সাইনবোর্ডসহ পুরো এলাকায় জোর করে এবং নামমাত্র মূল্যে কিনে জমি দখলের অভিযোগের সূত্র ধরে বের হয় থলের বেড়াল। পর্দা খুলে যায় তার অন্ধকার জগতের।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তার এইসব কুকীর্তির একের পর এক ভুক্তভোগীর অভিযোগ। 

সানারপাড়ের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আলামিন বলেন, ‘ওসমান গণি প্রথমে যেকোনো উপায়ে নিজেরাই পছন্দের জমির ঝামেলা সৃষ্টি করে। পরে কৌশলে নিজেদের নামে লিখে নেয়। যদি কোনো মানুষ জমি তার নামে লিখে দিতে না চায় তাহলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।’  

আলামিনের নানার সম্পত্তিতে কাগজে সামান্য ত্রুটি থাকায় সেই সম্পত্তি ওসমান গণি তার নামে লিখে দিতে বলে আলামিনরা জমি লিখে দিতে রাজি না হলে আল আমিনদের নামে ৮ থেকে ৯টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।  

ভুক্তভোগী আমেনা বেগম কান্নাস্বরে বলেন, ‘আমাদের সম্পদের কিছু ত্রুটি থাকায় প্রতিপক্ষ এবং হল কোম্পানি দুপক্ষই মামলা করি। এই জমি ওসমান গণি ক্ষমতার জোরে দখল করতে চেয়েছিল। আমরা বাদী-বিবাদী মিলে মামলাটি মীমাংসার মাধ্যমে তুলে নেই। মামলা মীমাংসার মাধ্যমে তুলে নেওয়ার সময় ওসমান গণি জমি থেকে কোনো প্রকার সুবিধা না নিতে পারায় আমাদের নামে দুটি মিথ্যা মামলা করে এবং বিভিন্নভাবে এখনো হয়রানি করছে। আমরা এটার উপযুক্ত বিচার চাই।’

উত্তর সাইনবোর্ডের ভুক্তভোগী লিয়াকত হোসেন বলেন, ‘ওসমান গণি অন্যের ৮ কাঠা জমি দখল করে জাল দলিল বানিয়ে বায়নানামা তৈরি করে আমাদের কাছে ৪২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে আমরা খবর পাই এই জমিটির মূল মালিক অন্যজন পরে আমরা আইনের সহযোগিতায় যাই। যা এখনো চলমান আছে।’

দ্রুত শুদ্ধি অভিযান এবং কঠোরভাবে আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিদস্যু মাফিয়া সম্রাট-ভূমিখেকো ওসমান গণির গ্রাস থেকে রক্ষা করা এখন এলাকার মানুষের সময়ের দাবি।

মো. সজীব হোসেন/এমআই 

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর