ডিভোর্স নিয়ে দ্বন্দ্ব
তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে ওসিকে ফাঁসাতে এসপির দপ্তরে অভিযোগ!
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:১৫
বাদী-বিবাদীর দ্বন্দ্বের রোষানলে পড়েছেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। নিজেদের পক্ষে সমাধান না আসায় সম্প্রতি ওসির বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
যদিও অভিযোগের সত্যতা ও গ্রহণযোগত্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগকে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে মাদক, জুয়া, দখল, চাঁদাবাজমুক্ত সিংগাইর গড়ার অন্তরায় হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, ওসির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের নেপথ্যে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন রয়েছে। যারা মাদক, জুয়া, দখল, চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে ওসি জাহাঙ্গীরকে বাধা মনে করছেন। তাদের দ্বারাই প্ররোচিত হয়েছেন অভিযোগকারী কাজী আরিফুর রহমান।
জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি সিংগাইরের চর আজিমপুর গ্রামের কাজী গোলাম হোসেনের ছেলে কাজী আরিফুর রহমান ওসি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) দপ্তরে একটি অভিযোগ করেন।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, অভিযোগকারীর ছোট ভাই কাজী শরিফুর রহমান ৯ বছর আগে চাঁদনী আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের একটি ছেলেও রয়েছে। সম্প্রতি চাঁদনী তার স্বামীর ৮ ভরি স্বর্ণ, ৪৫ হাজার সৌদি রিয়াল ও দুটি স্মার্টফোন নিয়ে পালিয়ে যান। সিংগাইর থানায় অভিযোগ দায়েরের পরও ওসি তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা না নিয়ে চাঁদনীকে ছেড়ে দেন এবং মিথ্যা মামলার হুমকি দেন।
অভিযোগকারী নিজেও বলছেন, অভিযোগে ভুলক্রমে ওসি তদন্তের পরিবর্তে ওসির নাম লেখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার ওসি আমাদের মামলা নিতে চায়নি। তবে তিনি কোনো ভয়ভীতি দেখাননি বা আমাদের সামনে রিয়াল বা কোনো টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার চাঁদনী দেয়নি।
যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছেড়ে দেওয়া নয়, চাঁদনির মায়ের ‘খুনের পর গুমের’ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাভার থেকে উদ্ধারের পর পিতার হেফাজতে দেওয়া হয় তাকে। স্বামীর হারানো মালামাল উদ্ধারের জন্যও পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করতে বলা হয়।
সিংগাইর থানা পুলিশ জানায়, রহস্যজনক কারণে স্বামীর পক্ষ মালামাল উদ্ধারের মামলা না করে উল্টো ওসি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধেই পুলিশ সুপারের দপ্তরে অভিযোগ করেন। যে অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ৫ জানুয়ারি চাঁদনীর মা তার মেয়েকে খুন করে গুম করার অভিযোগ করেন থানায়। একই দিন চাঁদনীর স্বামী কাজী শরিফুর রহমানও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বর্ণ, রিয়াল ও স্মার্টফোন নিয়ে পালানোর অভিযোগ করেন। দুই পক্ষের অভিযোগই তদন্ত করা হয়।
তিনি বলেন, গত ৯ জানুয়ারি সাভারের বিরুলিয়া এলাকা থেকে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে চাঁদনী ও তার সাথে থাকা এক যুবককে উদ্ধার করেন। চাঁদনীর কাছে পাওয়া তার ব্যক্তিগত একজোড়া কানের দুল, একটি আংটি, একজোড়া নুপুর ও একটি স্মার্ট ফোন এসআই মোতালেবের হেফাজতে নেওয়া হয়। দুই পক্ষের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের সম্মতিতেই সদ্য ডিভোর্স হওয়া চাঁদনীকে তার বাবার হেফাজতে দেওয়া হয়। স্বামীর হারানো মালামাল উদ্ধারের জন্য মামলা করতে বলা হয়। কিন্তু তারা মালামাল উদ্ধারের মামলা না করে আমার বিরুদ্ধে এসপি স্যারের দপ্তরে অভিযোগ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্তে যদি তিনি দোষী প্রমাণিত হন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয় তা তিনি মেনে নিবেন।
চাঁদনীকে উদ্ধারের পর ঘটনার সমাধানে থানায় ওসির কক্ষে উপস্থিত থাকা উভয়পক্ষের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি মাদক, জুয়া, ইভটিজিং, দখল ও চাঁদাবাজি বন্ধে তিনি দৃশ্যমান বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এসময় একটি মহল তার (ওসি) বিরুদ্ধে কাজী আরিফুর রহমানকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।
প্রত্যক্ষদর্শী সিংগাইর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও পৌর বিএনপির প্রচার সম্পাদক নুর আলম বাবুল বলেন, চাঁদনীকে থানায় আনার পর ওসির রুমে তিনিসহ উভয়পক্ষেরই গণমাণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সম্মুখেই চাঁদনীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া একজোড়া কানের দুল, একটি আংটি, একজোড়া নুপুর, নগদ ১৬ হাজার ৩০০ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন আমরা দেখতে পাই।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিভোর্স হওয়ায় চাঁদনীকে তার পিতার হেফাজতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন উভয়পক্ষের মুরব্বীরা। এ সময় ওসি সাহেব মুরুব্বিদের সামাজিক সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দেন এবং স্বামীর পরিবারকে মামলা করতে বলেন। এর বাইরে সেদিন কেউ কাউকে হুমকি-ধমকি দিয়েছে এমনটা শুনিনি।
ওসির বিরুদ্ধে হওয়া অভিযোগের তদন্ত হয়েছে কিনা ও তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে কী ব্যবস্থা নেবেন- এমন প্রশ্নে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোসা. ইয়াসমিন খাতুন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা অভিযোগের তদন্ত করেছি। কিন্তু এর সত্যতা মেলেনি।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এটা নিয়ে অভিযোগই হয় না। আমরা আসলে প্রো-অ্যাকটিভ পুলিশিং করতে চাচ্ছি, ভালো পুলিশিং করতে চাচ্ছি। এটা তো আমার ওসিদেরকে নিয়েই করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভালো কাজে তাদেরকে সাহস দিতে হবে। এখন ভাল করতে গিয়ে যদি ওসিদের বিপদেই পড়তে হয়, তাহলে তো মুশকিল।
এনএমএম/ওএফ