Logo

অর্থনীতি

সকুক বন্ড

সড়ক ও সেতু নির্মাণে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে সরকার

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২৫, ১৫:৫৭

সড়ক ও সেতু নির্মাণে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে সরকার

বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ সড়ক ও সেতু নির্মাণের জন্য সুকুক বন্ডের মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করছে। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নিলামে ৭ বছর মেয়াদি এই বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। বন্ডের বার্ষিক ভাড়া হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৯.২৫%। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নিলামে শরিয়াহ্ ভিত্তিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কনভেনশনাল ব্যাংকের ইসলামিক শাখা এবং ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন। মোট ১০ হাজার ৯২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকার বিড জমা পড়ে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৩.৬৪ গুণ বেশি। এত বেশি বিড জমা পড়ায় নির্ধারিত আনুপাতিক হারে বিনিয়োগকারীদের সুকুক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই অর্থ পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প (সিআইবিআরআর-২) বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হবে। প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮টি বিভাগের ৫৮টি উপজেলায় ৮২টি সেতু নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১৭ হাজার ৬৯৭ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক, ৩৮ হাজার ৮০০ মিটার সংযোগ সড়ক এবং ৪ হাজার ২৩০ মিটার নদীশাসনের কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, পণ্য পরিবহন খরচ কমবে এবং স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জানা গেছে, গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) অর্থের জন্য ৭ বছর মেয়াদী  সুকুক বন্ড ইস্যুর করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কমিটি বৈঠক করে বন্ড ইস্যুর বিষয়টি চূড়ান্ত করের পরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।  বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহাম্মদ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়)’-এ সুকুক বন্ডের অর্থ দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। সুকুকটির নাম দেওয়া হয়েছে ইসটিনা ও ইজারা। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিআইডি) মাধ্যমে প্রকল্পটির আওতায় বাংলাদেশের আট বিভাগের ৫৮টি উপজেলায় ৮২টি সেতু নির্মাণের কাজ চলমান। যার মোট দৈর্ঘ্য ১৭ হাজার ৬৯৭ মিটার, ৩৮ হাজার ৮০০ মিটার সংযোগ সড়ক এবং চার হাজার ২৩০ মিটার নদীশাসনের কাজ বাস্তবায়ন। 

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রকল্প এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষি ও অকৃষিপণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজীকরণ ও ব্যয় হ্রাস এবং স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত হবে। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘অনেক মানুষ বিনিয়োগে ধর্মীয় চেতনাকে সামনে রাখেন। যা ইসলামিক সুকুক বন্ডের মাধ্যমে কেটে যাবে। নতুন এই ভেঞ্চার বিনিয়োগের বাড়তি সুযোগ সৃষ্টি করবে। যা অর্থায়নে নতুন দ্বার উন্মুক্ত করল। বিশেষ ইসলামী বিনিয়োগের পথ প্রসারিত হলো। যা দীর্ঘ মেয়াদে নতুন বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেবে।’

এর আগে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং খাতের তারল্যকে সরকারের ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহারের লক্ষ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড বা সুকুক চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ‘সুকুক’ শব্দটি প্রকৃতপক্ষে ‘সক্ক’ শব্দটির বহুবচন—এটি একধরনের আইনগত দলিল বা চুক্তি। সুকুকের প্রথম প্রচলন সপ্তম শতাব্দীতে, বর্তমান সিরিয়ার দামেস্কে।

সুকুক হলো কোনো সেবা, প্রকল্প, বিনিয়োগ কিংবা কোনো স্থাবর সম্পদ বা তা ভোগদখলের অধিকারের অবিভাজিত স্বত্বের প্রতিনিধিত্বকারী ইসলামসম্মত সনদ। অর্থাৎ সুকুক হচ্ছে কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ কিংবা কোনো সেবার আংশিক মালিকানা নির্দেশকারী দলিল।

প্রচলিত বন্ডের সঙ্গে সুকুকের মূল পার্থক্য হলো সুকুক কোনো সম্পদের ওপর স্বত্ব বা মালিকানার ভিত্তিতে ইস্যু করা হয়। যার অর্থ, সুকুক কোনো ঋণ নয়, বরং একার্থে এটি আংশিক মালিকানা বা স্বত্ব। সুকুকের মূল বৈশিষ্ট্য হলো এর পরিচালনা সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহভিত্তিক হওয়ায় এতে রিবা বা সুদ নেই। হয় শরিয়াহর বিধিবিধান সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করে সুকুক ইস্যু ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

সুকুক ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ কেবল শতভাগ শরিয়াহসম্মত কোনো প্রকল্পেই ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া শরিয়াহভিত্তিক হওয়ায় সুকুকের মুনাফা কেবল বিনিয়োগ আয় থেকেই দেওয়া যাবে এবং এই মুনাফার হার পূর্বনির্ধারিত (ফিক্সড) নয়। কিন্তু প্রচলিত বন্ডের সুদ পূর্বনির্ধারিত—বন্ড থেকে উত্তোলিত অর্থ সুনির্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যয়ের বাধ্যবাধকতা নেই এবং তা কোনোভাবেই সম্পদের মালিকানাও নির্দেশ করে না।

  • এএইচএস/এমজে
Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর