প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামিক উইংয়ে বাড়ছে আমানত

আনোয়ার হোসাইন সোহেল
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১৯:৪৭

আস্থা সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংকগুলোর বদলে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামিক উইংয়ের দিকে ঝুঁকছেন আমানতকারীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামিক উইংয়ের আমানত ২০ থেকে ১১০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্পূর্ণ শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা সংকট দেখা দেওয়ায় আমানতকারীরা প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামিক উইংয়ের দিকে ঝুঁকছেন।
বিগত সরকারের সময় এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা কিছু ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের কারণে গ্রাহকদের আস্থা হ্রাস পেয়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠিত হলেও গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে ব্যাংক খাতে মোট আমানত প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭.৪৭ শতাংশ। তবে ১৮টি ব্যাংকের আমানত ২৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামিক উইংয়ের আমানত ১০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কিছু প্রচলিত ব্যাংক ও তাদের ইসলামিক উইং বিপুল পরিমাণ আমানত আকর্ষণ করেছে, যা সংকটে পড়া প্রায় অর্ধডজন ব্যাংক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আর্থিক অনিয়ম প্রকাশ্যে আসার পর গ্রাহকরা আর্থিকভাবে স্থিতিশীল ব্যাংকগুলোতে আমানত স্থানান্তর করেছেন।
২০২৪ সালে ইসলামিক উইংয়ের আমানত প্রবৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক: ৬৬.৩৪ শতাংশ
- ওয়ান ব্যাংক: ৫৪ শতাংশ
- যমুনা ব্যাংক: ২৭.১৭ শতাংশ
- মিডল্যান্ড ব্যাংক: ৩৩.৩৭ শতাংশ
- সোনালী ব্যাংক: ৩৪.১৫ শতাংশ
- মার্কেন্টাইল ব্যাংক: ২৯.১৫ শতাংশ
- এসবিএসি ব্যাংক: ২৮.৬৯ শতাংশ
- ট্রাস্ট ব্যাংক: ৩৫ শতাংশ
- সিটি ব্যাংক: ২০.৪০ শতাংশ
- মেঘনা ব্যাংক: ৭২ শতাংশ
- ইউসিবি: ২৭ শতাংশ
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে মানুষের আস্থা কমার কারণ পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ করে এস আলমের মতো বড় বিনিয়োগকারীদের সীমাহীন লুটপাট। অন্যদিকে, আমরা আমাদের ব্যাংকে শরিয়া উইংকে অত্যন্ত কঠোরভাবে মনিটরিং করি। যার কারণে আমাদের ব্যাংকে ইসলামিক উইংয়ের প্রতি গ্রাহকের আস্থা বাড়ছে এবং আমানতও বাড়ছে।’
ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স (এনসিসি) ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শামসুল আরেফিন বলেন, গত বছর কিছু ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা আমাদের আমানত প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে।
পুবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, অনেক আমানতকারী পূর্ণাঙ্গ শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের প্রতি আস্থা হারিয়ে প্রচলিত ব্যাংকের ইসলামিক উইংয়ের দিকে ঝুঁকেছেন। আমাদের শরিয়া পরিপালনের মাত্রা খুবই উঁচু, যা আমানতকারীদের ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের প্রতি আস্থা তৈরি করেছে।
প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসান অর রশিদ বলেন, বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের চাহিদা খুব বেশি। শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকি ভাগাভাগির ব্যবস্থা, অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক কার্যক্রম এবং সম্পদ-ভিত্তিক লেনদেন মানুষকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়।
- এএইচএস/এমজে