বাজেট
তামাকের উপর কর বাড়বে না : এনবিআর চেয়ারম্যান

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১৯:২৪

আগামী বাজেটে তামাকের উপর কর বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। এছাড়া পুনঃপুন কর অব্যাহতির সুযোগও থাকবে না আগামী বাজেটে। তবে শ্রমঘন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করা হলে সে ক্ষেত্রে কর অব্যাহতির এ সুযোগ দেওয়া হবে। একই প্রতিষ্ঠান কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে আবার নিবে, সেই সুযোগ থাকছে না।
সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে আয়োজিত প্রাক বাজেট আলোচনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, চলতি করবর্ষে অনলাইন রিটার্নের মধ্যে ৬৬ শতাংশই শূন্য রিটার্ন দাখিল করেছে। ১৫ লাখ অনলাইন রিটার্নের ১০ লাখই সাড়ে ৩ লাখ টাকার নিচে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। অর্থাৎ ১০ লাখ করদাতা তাদের আয়কর বিবরণীতে যে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন তার বিপরীতে কোনো কর দেয়নি। কাজেই এটি বাড়ানো হবে না। যারা আয় করযোগ্য হবে, তারা দিবেন, যোগ্য না হলে দেবেন না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করে দেখব এসব রিটার্ন দাখিলকারীর সত্যি সত্যিই কর যোগ্য আয় ছিল কি না।
আলোচনা সভায় ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে ব্যক্তি করদাতাদের কর ছাড়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিলে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
এনবিআর আরও চেয়ারম্যান বলেন, ১০০ টাকার তামাক বিক্রি হলে ৮৩ টাকা সরকার পায়। বাকি ১৭ টাকা দিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন ব্যয় ও মুনাফা করে। এই অবস্থায় তামাকের ওপর আমরা আর কর বাড়াতে চাই না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সাড়ে তিন লাখ থেকে ৪ লাখ বা ৫ লাখ টাকায় নিয়ে আসা যৌক্তিক কথা। সমস্যা হলো- যেমন ধরেন এখন ডিজিটালি রিটার্ন সাবমিশন হওয়ায় সব তথ্যগুলো আমার হাতে চলে আসছে। আজকে দেখলাম ১৫ লাখ ১৫ হাজার হয়েছে। প্রতিদিন কিন্তু ২-৩ হাজার করে রিটার্ন পাচ্ছি এখন। আমাদের অনলাইন রিটার্ন এখনো চালু আছে। অনলাইন রিটার্ন বন্ধ নেই। আবার অনেকেই রিভাইজড রিটার্ন দিতে পারছেন অনলাইনে, এটা একটা বড় সুবিধা হয়েছে। ১৫ লাখ রিটার্নের মধ্যে ১০ লাখ রিটার্নই জমা পড়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকার নিচে। এরা এক টাকাও ট্যাক্স দেয়নি। টু থার্ড। পেপার রিটার্নের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। মফস্বলে যান, চিত্র কিন্তু একই। এটি বাড়িয়ে চার লাখ করলে শূন্য রিটার্নের সংখ্যা আরও এক লাখ বেড়ে যাবে।
করদাতারা কর দিতে চায় না জানিয়ে তিনি বলেন, কোয়ালিটি ট্যাক্স পেয়ারের সংখ্যা খুবই কম। এখন যদি আমরা এই সিলিংটাকে একটু বাড়িয়ে দেই, আমরা আলোচনা করব, দেবো না এটা বলছি না। শুধু এতটুকু বলছি, আরও বড় একটা গ্রুপ যারা মিনিমাম কর দিতো, তারাও ওই যে জিরো ট্যাক্সে চলে যাবে। এইটা হলো অসুবিধা।
আলোচনা সভায় ইআরএফ আগামী বাজেটে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির ওপর করের বোঝা কমাতে বাড়তি দেওয়া কর এমএফএসের মাধ্যমে ফেরতের ব্যবস্থা করা, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ওপর করহার ৫ শতাংশে সীমিত রাখা, বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডকে করমুক্ত করা, ব্যক্তিশ্রেণির করহার ৩০-৩৫ শতাংশ করা, ভ্যাটের হার ৭ শতাংশ করা, পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইনসহ মিডিয়ার করহার কমানা, পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে এনবিআর সাধারণ কারখানা ও পরিবেশবান্ধব শিল্পের মধ্যে কর্পোরেট করের ব্যবধান কমপক্ষে ৫ শতাংশ রাখা যেতে পারে। কৃষি যান্ত্রিকরণের জন্য মেশিনারী ও এর যন্ত্রাংশ এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্ককর মুক্ত রাখাসহ ৩৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। দৈনিক সমকালেরর ডিপুটি এডিটর জাকির হোসেন নিউজ পেপার আমদানিতে শুল্ককর কমানো প্রস্তাব দিলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের স্বার্থের কারণে এটি দেওয়া সম্ভব নয়। দু’পক্ষ সম্মত হলে এখাতে কর অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কারণ এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ হয় তা খুব সামান্য।
বাজেট আলোচনায় অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অবু কাওসার, একাত্তর টিভির বিজনেস এডিটর কাজী আজিজুল ইসলাম।
ডিআর/ওএফ