সরকার আগামী জুনের মধ্যে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাশা করছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দের নেতৃত্বে একটি দল সচিবালয়ে দেখা করার পর তিনি এ কথা বলেন।
৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের শর্ত পূরণের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে আইএমএফের তৃতীয় পর্যালোচনা দল ঢাকায় পৌঁছেছে।
ড. সালেহউদ্দিন এর আগে ওয়াশিংটনে বলেছিলেন, তারা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও ওপেক তহবিলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং তারা আশা করছেন আগামী জুনের মধ্যে এ পরিমাণ অর্থ পাওয়া যাবে।
তিনি বলেছিলেন, ‘প্রতিশ্রুতি আসবে, কিন্তু সাহায্য প্রবাহ ঠিক এক বছরে আসবে না।’
উপদেষ্টা বলেন, আইএমএফ মিশন আবারো তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে আগামী বছরের মার্চে আসতে পারে।
চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চের দিকে ১১০ কোটি ডলার পাওয়ার আশা করছেন।
তিনি বলেন, আইএমএফ মিশন এবার এসেছে মূলত রাজস্ব ঘাটতি, প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি রাজস্ব খাতের দিকে নজর দিতে।
তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কী ধরনের কৌশল নিয়েছি এবং আগামী দিনে আমরা কী কৌশল গ্রহণ করব, এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ব্যাংকিং খাত সংস্কার, খেলাপি ঋণ, আমানতকারীদের চাপসহ অন্যান্য বিষয় নিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলবে আইএমএফ মিশন।
সার্বিক বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, তারা মনে করেন, পুরোপুরি না হলেও স্থিতিশীলতা এসেছে। এখন বিনিয়োগ করার ও বিদেশি দাতাদের আসার সময় এসেছে।
সালেহউদ্দিন বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার হার এখন খুব বেশি ওঠানামা করছে না, যদিও কিছু ব্যাংকের তারল্য সহায়তার প্রয়োজন ছিল, তবে বেসরকারি খাতের বৃহত্তম ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক পুনরুদ্ধার করছে। অন্যান্য ব্যাংক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছি।
উপদেষ্টা বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ খুবই ভালো, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো, তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় আমদানিও কিছুটা কম হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এ ব্যাপারে কী করা যায় ভাবছি। আইএমএফ মিশন এখানে কিছু দিন থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলে, ‘আমরা তাদের বলেছি, আমরা যে পদক্ষেপই নিই না কেন, ভবিষ্যতে দেশের জন্য উপকারী হবে এমন পদক্ষেপই নেব।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না যা পরবর্তী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবে। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই এবং সঠিক চিন্তাভাবনা করে ব্যবস্থা নেব। আইএমএফ মিশনও আশ্বস্ত হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আশা করছি আইএমএফ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয় এমন টার্গেটই দেবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আলোচনা করে তারা অতিরিক্ত তহবিল চাইবেন। এখন আমরা চলমান ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করছি। এরপরে অতিরিক্ত তহবিল চাওয়ার কথা বিবেচনা করব।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের মতো সরকারের সংস্কার উদ্যোগের জন্য ব্যয় রয়েছে এবং বৈদেশিক অর্থায়নের পাশাপাশি বাণিজ্য ঘাটতি ও চলতি হিসাবের ভারসাম্য মোকাবিলার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
চলতি বছরের ২৪ জুন আইএমএফ বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ১১১ কোটি ডলার ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দলের আগামী ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
ওএফ