ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনিরুলকে অব্যাহতি
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৫
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মনিরুল মওলাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ তাকে অব্যাহতি দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ঋণ জালিয়াতিতে সহায়তা করায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, জালিয়াতির মাধ্যমে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী এস আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি ও সিইও মনিরুল মাওলাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত বৃহস্পতিবার দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়- ১ এ বাদী হয়ে ওই মামলা করেন উপ-পরিচালক ইয়াছিন আরাফাত। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে মুরাদ এন্টারপ্রাইজের অনুকুলে ঋণের নামে এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমদ, সাবেক পরিচালক ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক কামরুল হাসান ও সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ।
এছাড়াও ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কেকিউএম হাবিবুল্লাহ, সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রেজাউল করিম, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জিএম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ উদ্দিন, ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমানের এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাক্তাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাক্তাই শাখার প্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মনজুর হাসান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ও দক্ষিণের অপর জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আসামি হয়েছেন- মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংকের মোহাম্মদ এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং করপোরেশনের মোরশেদুল আলম, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, রেইনবো করপোরেশনের রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, আনছার এন্টারপ্রাইজের আনছারুল আলম চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের সহিদুল আলম, ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশনের আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সের এম এ মোনায়েম, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউসের এরশাদ উদ্দিন, জাস্ট রাইট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মো. গিয়াস উদ্দিন, এক্সক্লুসিভ বিজনেস হাউসের ফেরদৌস আহম্মদ বাপ্পি, এনেক্স বিজনেস কর্নারের আনোয়ারুল আজম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউসের মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ মামুন, চৌধুরী বিজনেস হাউসের মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী, ডিলাক্সিয়াম ট্রেডিং করপোরেশনের কাজী মেজবাহ উদ্দিন, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের এমডি মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের এমডি রাশেদুল আলম ও পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সবুর, স্যোসাল ট্রেড সেন্টারের আলী জহুর ও শাহ আমানত ট্রেডার্সের মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী চৌধুরী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২১ সালের নভেম্বরে এস আলম সংশ্লিষ্ট মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সরওয়ার চৌধুরী চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করেন। পরের মাসে শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা অনুমোদন করেন। মিথ্যা তথ্যের ওপর জাল কাগজে এ ঋণের জন্য আবেদন করে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ। পরে এ ঋণ অনুমোদন করা হয়। কোনো প্রকার যাচাই না করেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকের কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে এ ঋণ অনুমোদন করেন। প্রথমে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করা হলেও পরে সেটা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মুরাদ এন্টারপ্রাইজ যে বিনিয়োগের কথা বলে ঋণ নিয়েছিল, তা না করে এস আলম তার বিভিন্ন ব্যবসার ঋণ পরিশোধে এ টাকা ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে তারা মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছেন।
এমএম/এমবি/ওএফ