লেনদেন কমেছে ৭০-৮০ ভাগ
ক্রেতাশূন্য নরসিংদীর বাবুরহাট
সুমন রায়, নরসিংদী
প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩০
ছবি : বাংলাদেশের খবর
চারিদিকে বইছে শীতের আমেজ। শীতকে ঘিরে গরম কাপড়ের চাহিদা বাড়লেও কমেছে দেশীয় কাপড়ের চাহিদা। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ দেশীয় পাইকারি কাপড়ের হাট ‘নরসিংদীর শেখেরচর বাবুরহাটে’।
সেখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছেন, শীতের মৌসুম হওয়ায় গরম কাপড়ের চাহিদা বাড়লেও নিত্য ব্যবহারের কাপড়ের চাহিদা কমেছে।
তাই হাটের বেচাকেনা নেমেছে স্বাভাবিকের তুলনায় অর্ধেকেরও নিচে। হাটে ক্রেতাদের আনাগোনাও এখন প্রায় শূন্যের কোঠায়।
বাবুরহাটের সকল স্তরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শেখেরচর-বাবুরহাটে প্রতি বৃহস্পতি থেকে শনিবার, তিনদিন পাইকারি কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসছে ছোট-বড় প্রায় পাঁচ হাজার দোকান।
গামছা, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্টপিস, প্যান্টপিস, পাঞ্জাবির কাপড়, থানকাপড়, বিছানার চাদরসহ দেশীয় সব ধরনের কাপড় মেলে এই হাটে।
শীতের মৌসুম আসলেই বাবুরহাটের বেচাকেনা এমনিতেই কমে যায়। এই সময়ে গরম কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকায় দেশীয় অন্যান্য কাপড়ের চাহিদা কমে যায়। এতে সার্বিকভাবে হাটের বেচাকেনায় মন্দাভাব বিরাজ করে।
প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা তিন মাস বাবুরহাটে বেচাকেনা নেমে আসে ২০ থেকে ৩০ শতাংশে। থ্রি-পিস ও শাড়ি ব্যবসায়ী হিমেল বলেন, শীতের মৌসুমে আমাদের বেচাকেনা কমে যায়। যতদিন শীতের আবহাওয়া থাকবে ততদিন শাড়ি ও থ্রি পিসের বেচাকেনা কম থাকবে। শীত ছাড়াও কাপড় বিক্রি কম। তবে আসছে রমজানকে ঘিরে অনেক ব্যবসায়ীরাই এই সময়টাতে কাপড় স্টক করবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছি, আমাদের অনেকেই এভাবে কাপড় স্টক করতে পারি না। যদিও এই মুহূর্তে কাপড়ের দাম অনেকটাই কম। গত দুই মাস আগেও কাপড়ের যে দাম ছিল, তার থেকেও অনেকটা কমে গেছে এখন।
শাড়ি ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া বলেন, এই মুহূর্তে বাবুরহাটের বেচাকেনা অনেক খারাপ। যেখানে প্রতি হাটে ১০ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করতে পারতাম, সেখানে এখন বেচাকেনা ২-৩ লাখ টাকাও হচ্ছে না। কোনোরকমে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছি। যদিও এই সময়ে কাপড়ের দাম স্বাভাবিক রয়েছে।
বর্তমানে সূতার দাম কম এবং চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ থাকায় কাপড় উৎপাদন বেশি হচ্ছে। সে কারণে কাপড়ের দামটাও স্বাভাবিক রয়েছে। যদিও এখন অল্প অল্প বেচাকেনা হচ্ছে।
লুঙ্গি ব্যবসায়ী নূর চাঁন বলেন, এই মুহূর্তে লুঙ্গির ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। একদিকে দেশের সার্বিক বাণিজ্যিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। অন্যদিকে শীত আসায় লুঙ্গির চাহিদাও কমে গেছে। এছাড়া হাটে পাইকারি ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও কমে গেছে। বেচাকেনা ৮০ ভাগ কমে গেছে। তবে আশা করছি, আসছে রমজানে ব্যবসা ভাল হবে।
নরসিংদী শেখেরচর (বাবুরহাট) বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. বোরহান উদ্দীন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিভিন্ন মৌসুমে প্রতি হাটে প্রায় তিনশ কোটি টাকার বেচাকেনা হয়। এ মুহূর্তের যেহেতু শীত, তাই বাবুরহাটের বেচাকেনার দিক দিয়ে এখন অফসিজন। বাবুরহাটের বেচাকেনা একেবারে নেই বললেই চলে। প্রায় সময়ই ক্রেতাশূন্য থাকে বাবুরহাট। তবে রমজানে বেচাকেনা ভালো হবে বলে আমরা আশা করছি।
বাবুরহাটের অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি জানান, ক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো হাটে এখন পর্যন্ত ৪৮টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আরো ১৬টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য পুলিশের পাশাপাশি বণিক সমিতির লোকজনও কাজ করছে। আগে বণিক সমিতির ৩০ জন নিরাপত্তা কর্মী ছিল। এখন তা বাড়িয়ে ৪২ জন করা হয়েছে।
এনএমএম/এআরএস/এমএইচএস