আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য
৪৫০ কোটি টাকার ফ্ল্যাট ক্রয় চুক্তি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের
প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৩

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২১ তলা একটি ভবনের ১৫ তলা কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটির বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে।
রাজধানীর গুলশানে ৪৫০ কোটি টাকায় কিনতে চাওয়া সেই ফ্লোরগুলোর মধ্যে গ্রাউন্ড ফ্লোর ও ফার্স্ট ফ্লোর আগেই ভাড়া নিতে চুক্তি করেছে ঢাকা ব্যাংক। এছাড়া ঢাকা ব্যাংক আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও অনুমোদন নিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে এমটিবি’র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা জানান, ব্যাংকটি মূলত তাদের আর্থিক সামর্থ্য প্রকাশের জন্য ডিএসইর মাধ্যমে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। যদিও বিষয়টি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আগেই অবহিত করার দরকার ছিল। যেহেতু তারা তা না করেই কাজটি করেছে, বিষয়টি মার্কেট ম্যানুপুলেট করার জন্যও হয়ে থাকতে পারে।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক গুলশান-১ নম্বরের ১৩৮ নম্বর সড়কের ২১ তলা ওই ভবনের প্রথম ১৫ তলা কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
ব্যাংকটি আরও জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রধান কার্যালয়ের জন্য ভবন কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গুলশান-১ নম্বরের ১৩৮ নম্বর সড়কে এই বাণিজ্যিক ভবনটি অবস্থিত। ভবনটির নিচতলা থেকে ১৪ তলা পর্যন্ত মোট ১৫ তলা কিনতে নিবন্ধন ফি ও ভ্যাট ছাড়া আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। প্রতিটি ফ্লোর কিনতে খরচ হবে ৩০ কোটি টাকা। তবে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমোদন সাপেক্ষে।
অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর গুলশান-১ নম্বরের ১৩৮ নম্বর সড়কের ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখা স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায়। এছাড়া একই ভবনের দ্বিতীয় ফ্লোরে ঢাকা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অল্প কয়েকটি বিভাগের কার্যক্রম স্থানান্তরের জন্য অনুমোদন পায়।
আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ভবনটির মালিক কামার সুলতানা একটি সময় পরে ঢাকা ব্যাংকের সঙ্গে গড়িমসি করে। এক পর্যায়ে ঢাকা ব্যাংক আদালতের দ্বারস্থ হয়।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ঢাকা ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হওয়া ফ্লোর দুটির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তা ভাড়া বা বিক্রি করা যাবে না।
তবে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এসব কিছু উপেক্ষা করে গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভবন কেনার সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে। আর এই ঘোষণার পর ব্যাংকটির শেয়ার দর বেড়েছে ৬০ পয়সা।
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকটির শেয়ারের দর ছিল ১২ টাকা ৫০ পয়সা। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংকটির প্রতিটি শেয়ারের দর ৬০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ টাক ১০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বাংলাদেশের খবরকে জানান, দুই দফায় ঢাকা ব্যাংককে শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ স্থানান্তরের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক তাদের প্রধান কার্যালয় স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন জানায়নি।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেনি।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, এ বিষয়ে ব্যাংকটির পিএসআই সংক্রান্ত তথ্য ইস্যু হলে বিএসইসি ক্রয় আদেশ সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখবে। যদি সম্পদ ক্রয়ের ক্ষেত্রে নন কম্প্লাইন্স কিছু ঘটে থাকে তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কমিশন।
এএইচএস/এমএইচএস