-67de55a6832f6.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
রোগ নেই অথচ শরীরও ভাল নেই। যেকোনো কাজ করতে গেলেই শরীর জুড়ে ক্লান্তিভাব চলে আসে। শরীর ক্রমশ তার তরতাজা ভাব হারিয়ে ফেলে। পর্যাপ্ত ঘুমের পরও সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব যেন পিছুই ছাড়ছে না।মানসিকভাবেও ক্লান্তি অনুভব হয়। চলাফেরায় জানান দেয় শরীরের নানা জায়গায় যন্ত্রণা। মন ডুবে যায় অবসাদে। আপনার মধ্যেও কি এই উপসর্গ গুলো রয়েছে? এমন অনুভব করার কারণ কি হতে পারে?
অনেকে ভাবেন এ সব বুঝি জটিল কোনো রোগের লক্ষণ। মেডিক্যাল টেস্ট করানোর পরও কোনো রোগই ধরা পড়ে না। এগুলো হতে পারে বেশ কয়েকটি রোগের উপসর্গের সমষ্টি। ডাক্তারি ভাষায় যার নাম ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম, সংক্ষেপে সিএফএস। সমস্যাটি নিয়ে এখন বিশ্ব জুড়ে চলছে ব্যাপক গবেষণা। বিশেষ করে করোনা মহামারির পরে সিএফএস-এর সমস্যা বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফিজিশিয়ান ডা. অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘সিএফএস নির্দিষ্ট কোনও রোগ নয়, বেশ কয়েকটি রোগের উপসর্গের সমষ্টি। এই জন্য সিএফএস নির্ণয় করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। কী কারণে এটি হয়, তা এখনও নিশ্চিত করে বলা না গেলেও আন্দাজ করা যায়।’’
চিকিৎসকদের মতে এর মূল তিনটি উপসর্গ রয়েছে। এগুলো হল— ফ্যাটিগ বা ক্লান্তি, অল্প কাজ করে প্রবল পরিশ্রান্ত মনে হওয়া। জয়েন্টে ব্যথা, বিশেষ করে শারীরচর্চা করার পরে। এবং পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও তরতাজা না হওয়া। এ ছাড়া মানসিক সমস্যা, যেমন স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মনঃসংযোগে ঘাটতি, হাতের লেখা খারাপ হয়ে যাওয়া, চড়া আলো বা অতিরিক্ত শব্দ অসহনীয় মনে হওয়া, মাথা যন্ত্রণা, বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে বা দাঁড়ানো অবস্থা থেকে বসার সময়ে মাথা ঘোরা, গা গোলানো, বমি ভাব, খাবার পরে ব্লোটিং ইত্যাদি সমস্যাও হতে পারে।
এগুলো মূলত ভাইরাল ফিভার, ভিটামিন ডি-র অভাব, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির উপসর্গ। এ কারণে সিএফএস চিহ্নিত করা জটিল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন পরীক্ষা করে দেখা হয় এই ধরনের অসুখ হয়েছে কি না। কোনও রোগ না থাকলে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে একটি বা একাধিক উপসর্গ থাকলে চিকিৎসক ধরে নেন সিএফএস। এই সমস্যা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনও বয়সেই হতে পারে।
’’ সমস্যাটি ক্রনিক হওয়ায় দীর্ঘসময় ধরে ভুগতে হয়। এই সমস্যা শয্যাশায়ী পর্যন্ত করে দিতে পারে, ফলে বাড়ি-অফিস সর্বত্র কাজকর্ম ব্যাহত হয়। দেখা গেছে, যারা লং কোভিড সিনড্রোমে ভুগছে বা কোভিড থেকে সেরে উঠেছে, তাদের অনেকের মধ্যেই এই উপসর্গগুলো থেকে গেছে’’ বলেছেন রিউমাটোলজিস্ট ডা. অভ্রজিৎ রায়।
কারও কারও ক্ষেত্রে জয়েন্ট ফুলে যাওয়া, লাল হয়ে উঠা এমনকি ত্বকে র্যাশ হতে পারে। একে রিউমাটয়েড বলে। সিএফএস হলে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক আসবে, কিন্তু রিউমাটয়েড হলে আসবে না।
তবে সুস্থ হতে বেশ সময় লাগতে পারে। কেননা এই সমস্যা চিহ্নিত করাও বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই সেরে উঠতে শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ক্ষমতাকে বাড়াতে হবে। ব্যথা হলে এবং তার কারণ পাওয়া না গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে মাসাজ, ফিজিওথেরাপি, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করতে হবে। অন্যান্য সমস্যা যেমন, ভুলে যাওয়ার সমস্যা হলে লিখে রাখা অভ্যেস করতে হবে, প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ডায়েটের সাহায্যে তা বাড়ানো যেতে পারে। পেটের সমস্যায় প্রসেসড ফুড, ভাজা খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। রাতে কম ঘুম হলে ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে নিতে হবে।
সিএফএস-এ প্রথমে ওষুধ দেওয়া হয় না। কিন্তু যদি দেখা যায় ওষুধ ছাড়া কিছুতেই কাজ হচ্ছে না, তখন উপসর্গ দেখে ওষুধ দেওয়া হয়। তাছাড়াও সিএফএস-এর প্রভাব শারীরিক কিন্তু সোর্সটা সাইকোলজিক্যাল। সিএফএস প্রাণঘাতী নয়, কিন্তু এর ফলে কর্মক্ষমতা, উৎসাহ হারিয়ে ফেলতে পারেন একজন প্রাণবন্ত মানুষ। তাই প্রয়োজনে মনোবিদের কাছে যেতে হবে, এটি দ্রুত সারিয়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
টিএ