ছবি : সংগৃহীত
খাবারের স্বাদ-গন্ধ বদলাতে জায়ফলের জুড়ি নেই। পোলাও হোক কিংবা বিরিয়ানি, সামান্য জায়ফল আপনার খাবারে এনে দিতে পারে অতুলনীয় স্বাদ। এটি শুধু খাবারে স্বাদ বাড়ায় না, স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। তবে এই জায়ফল আপনাকে হ্যালুসিনেটও করতে পারে। এমনকি এটি বেশি পরিমাণে খেলে নেশা হওয়াও সম্ভব।
জায়ফল মাদক অপব্যবহারের সাথে যুক্ত সেই ১৯৬০ এর দশক থেকেই। সম্প্রতি ২০২০ সালে টিকটকে মানুষ বেশি মাত্রায় জায়ফল সেবন করে ‘হাই’হতে যেয়ে সবার নজরে আসে। তবে জায়ফলের এই প্রভাব সম্পর্কে আরও আগে থেকেই জানা ছিল। সর্বপ্রথম ১৫৭৬ সালে এর প্রমাণ পাওয়া যায়, যেখানে এক গর্ভবতী নারী জায়ফল সেবন করে নেশাগ্রস্ত হয়ে পরে। প্রায় ৭০ থেকে ৮৪ গ্রাম জায়ফল সেবন করেছিলেন তিনি।
নিঃসন্দেহে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। তবে রান্নার সময় সাধারণত সামান্য পরিমাণ ব্যবহার করা হয়। প্রশ্ন জাগতেই পারে তাহলে কতটুকু জয়ফল খাওয়া অতিরিক্ত বলে বিবেচিত হয়? নেশা হতে হলে এর জন্য একটি বড় পরিমাণ প্রয়োজন । অন্তত ৫ গ্রাম পরিমাণ জয়ফল খেলেই আপনি নেশাগ্রস্ত হয়ে পরবেন। যদিও কোনো রান্নাতেই এত পরিমাণে এই মসলা ব্যবহার হয় না।
জায়ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ার পাশাপাশি এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। তবে হ্যালুসিনোজেনিক বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী মসলাটির মধ্যে থাকা যৌগগুলো। উচ্চমাত্রায় এই যৌগগুলো থাকায় এটি নেশার প্রভাব তৈরি করে। মাইরিস্টিসিন এবং এলেমিসিন নামের এই দুটি যৌগ নেশার কারণ। মাইরিস্টিসিন যা এক্সট্যাসি নামেও পরিচিত। এটি একটি মোনোঅ্যামাইন অক্সিডেজ ইনহিবিটার। যা মস্তিষ্কে মেজাজ উন্নত করার জন্য দায়ী রাসায়নিকগুলোকে ভাঙতে বাধা দেয়। মজার বিষয় হলো, প্রথম উদ্ভাবিত অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো, তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে এটি এখন খুব কম ব্যবহার করা হয়।
২০০০ সালের জার্নাল অফ টক্সিকোলজি এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৩ বছরের এক মেয়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে ১৫ থেকে ২৪ গ্রাম জায়ফল খেয়ে ফেলে। তারপর তার শ্রবণ, দৃষ্টি এবং হ্যালুসিনেশনসহ অস্বাভাবিক আচরণ, বমি, ঝাপসা দৃষ্টি, অসাড়তা এবং ঝিমুনির লক্ষণ প্রকাশ পায়।
সাধারণত নেশা হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে এবং এর প্রভাব কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। বিভ্রম ছাড়াও, জায়ফল সেবনের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ঝিমুনি, মাথা ঘোরা এবং বিভ্রান্তি। তবে শ্বাসযন্ত্র এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা এবং পেটের সমস্যাও হতে পারে। এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিকার নেই। তবে অ্যাকটিভেটেড চারকোল দেওয়া যেতে পারে হজমতন্ত্র থেকে এটি বের করার জন্য।
টিএ