
সাত মাসের শিশু নিয়ে টিকা কেন্দ্রে এসেছেন পুরান ঢাকার বাসিন্দা তানজিলা রহমান। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও মেলেনি টিকা। কবে পাবেন সেটাও নির্দিষ্ট করে জানানো হচ্ছে না। এদিকে টিকাদানের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। তাই কিছুটা দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন তানজিলা। এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ফিরে যেতে হলো তাকে।
একই চিত্র দেখা গেল বাড্ডার টিকা কেন্দ্রে। ১১ মাসের শিশুকে টিকা দিতে না পেরে মেডিকেল সহকারীর সাথে তর্কে জড়িয়েছেন সুমাইয়া চৌধুরী। টিকা না পেয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। শিশুদের টিকার সংকটের এমন চিত্র শুধুমাত্র ঢাকার নয়। বাংলাদেশের খবরের প্রতিবেদকদের সারাদেশ থেকে পাঠানো তথ্যে উঠে এসেছে দেশজুড়ে টিকা সংকটের এমন চিত্র।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) তথ্য বলছে, জন্মের পর থেকে ২৩ মাস বয়সের মধ্যে ১০টি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে শিশুদের ৭ ধরনের টিকা দেওয়া হয়। টিকাগুলো হলো- বিসিজি, ওপিডি বা পোলিও, আইপিভি, পিসিভি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, এমআর-১ ও এমআর-২। বর্তমানে পিসিভি, আইপিভি, পেন্টাভ্যালেন্ট, এমআর-১ ও ২ টিকা পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। এর মধ্যে সরবরাহ না থাকায় পিসিভি ও পেন্টাভ্যালেন্ট টিকার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও সুরক্ষা বলয় বাড়াতে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা সবচেয়ে বেশি কার্যকর। পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা (ডিপিটি, হেপাটাইটিস-বি ও হিব ভ্যাকসিন) পাঁচটি টিকার মিশ্রণ- যা ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ধনুষ্টঙ্কার, হেপাটাইটিস-বি ও হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করে। জন্মের পর ছয় সপ্তাহ বা ৪২ দিন পূর্ণ হলে শিশুকে প্রথম ডোজ পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দিতে হয়। এরপর ২৮ দিন বা এক মাস পরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডোজ টিকা দিতে হয়।
টিকা সংকট প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘শিশুদের টিকা অতি জরুরি পণ্য। সুস্থ জাতি গঠনের লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে শিশুদের টিকা চালু রয়েছে। সময়মত টিকা দিতে না পারলে অনেক সময় শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। শিশুদের টিকা সময়মত দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এ বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে টিকা সময়মত না দেওয়ার ফলে চট্টগ্রামে হামে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা মারা গিয়েছিল। আমাদের সামনে এমন আরেকটি উদাহরণ হলো- রোহিঙ্গা শিশুরা যখন বাংলাদেশে আসে তখন তাদের মধ্যে ডিপথেরিয়া রোগ ব্যাপক আকারে দেখা যায়। কারণ এসব শিশুরা মিয়ানমারে টিকার আওতায় ছিল না।’
শিশুদের টিকার সংকটের বিষয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) সহকারী পরিচালক মো. শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ‘আমরা এতদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপারেশনাল প্লান (ওপি) থেকে টিকা পেতাম। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পর থেকে অপারেশনাল প্লান থেকে টিকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এখন টিকা কিনে আনতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে সব ধরনের টিকা আসতে শুরু করেছে। কিছু টিকা ধাপে ধাপে আসে। তাই কোনো জেলায় আগে যায় আবার কোনো জেলা পৌঁছাতে একটু দেরি হয়। আশা করছি খুব শিগগিরই টিকার সংকট কাটিয়ে উঠতে পারব।’
- এসআইবি/ওএফ