মানবতাবিরোধী অপরাধ
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতের্তে গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০২৫, ১০:৫৩

ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তেকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে পরোয়ানা জারির পর গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) হংকং থেকে ফেরার পর ম্যানিলা বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়।
২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন দুতের্তে মাদকের বিরুদ্ধে এক কঠোর অভিযান চালান। ওই অভিযানে বহু মানুষ নিহত হয়।
৭৯ বছর বয়সী দুতের্তে আগে থেকেই বলেছিলেন, গ্রেপ্তার হলে কারাগারে যেতে তিনি প্রস্তুত।
ফিলিপাইনের মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই গ্রেপ্তারকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান পিটার মারফি বলেন, ন্যায়বিচারের পথ দীর্ঘ, কিন্তু আজ তা সঠিক দিকে এগিয়েছে। দুতের্তের গ্রেপ্তার গণহত্যার জন্য জবাবদিহিতার সূচনা।
তবে, দুতের্তের সাবেক প্রেসিডেন্টিয়াল মুখপাত্র সালভাদর প্যানেলো এই গ্রেপ্তারকে ‘বেআইনি’ বলেছেন। কারণ ফিলিপাইন আগেই আইসিসি থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
আইসিসি জানিয়েছে, ফিলিপাইন সদস্যপদ প্রত্যাহারের আগের সময়কালে সংঘটিত অপরাধগুলোর বিষয়ে তাদের এখতিয়ার রয়েছে। দুতের্তে হংকং গিয়েছিলেন আগামী ১২ মে অনুষ্ঠেয় মধ্যবর্তী নির্বাচনে তার সমর্থিত প্রার্থীদের প্রচারণার জন্য।
স্থানীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, তিনি লাঠি ভর দিয়ে বিমানবন্দর থেকে বের হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার স্বাস্থ্য ভালো আছে। সরকারি চিকিৎসকরা তাকে পর্যবেক্ষণ করছেন।
মাদকবিরোধী যুদ্ধ
দেশটির অন্যতম বৃহৎ শহরের সাবেক এই মেয়র জনগণের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কড়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। নিরাপত্তা বাহিনীকে তিনি মাদকসংশ্লিষ্ট সন্দেহভাজনদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। অভিযানের সময় পুলিশের গুলিতে বা অজ্ঞাত হামলাকারীদের হাতে ছয় হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
দুতের্তে একবার বলেছিলেন, হিটলার ৩০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল। এখন ফিলিপাইনে ৩০ লাখ মাদকাসক্ত আছে। আমি খুশি হবো যদি তাদের হত্যা করতে পারি।
তবে সমালোচকরা বলেন, এই ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’ পুলিশি নির্যাতনের পথ খুলে দেয় এবং বহু সন্দেহভাজনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়। যদিও দুতের্তে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি নিজেকে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি এবং একজন কঠোর ও সৎ নেতা হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। এগুলো তাকে জনপ্রিয় করে তোলে। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ মিনদানাও থেকে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্টও তিনি।
দুতের্তের কন্যা সারা দুতের্তে বর্তমানে ফিলিপাইনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোসের সঙ্গে দুতের্তে পরিবারের রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রকাশ্যে ভেঙে পড়েছে। যদিও ২০২২ সালের নির্বাচনে মার্কোস ও সারা দুতের্তে যৌথভাবে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন।
ওএফ