রমজানে গাজায় ভয়াবহ ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৩৪২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ১২:২৮

ফিলিস্তিনের গাজায় বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৩৪২ জন নিহত হয়েছেন। যার মধ্যে বহু শিশু রয়েছে।
এর ফলে হামাসের সঙ্গে চলমান দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়েছে। মঙ্গলবারের হামলা গাজার বিভিন্ন এলাকায় চালানো হয়। দক্ষিণের খান ইউনিস ও রাফাহ, উত্তরের গাজা শহর ও কেন্দ্রীয় দেইর আল-বালাহ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে বহু শিশুও রয়েছে।
গাজা শাসনকারী হামাস বলেছে, ইসরায়েলের এই হামলা ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির একতরফা সমাপ্তি নির্দেশ করে।
এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, নেতানিয়াহু ও তার উগ্রপন্থী সরকার যুদ্ধবিরতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা গাজায় বন্দিদের অনিশ্চিত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
হামাস জনগণকে প্রতিবাদে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছে। আরব ও মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের বিবেকবান মানুষদেরও আন্দোলন করার আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) বলেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাহত করছে।
শিশুদের দেহাবশেষ হাতে নিয়ে ছুটছেন মানুষ
গাজার শিক্ষক আহমেদ আবু রিজক আল-জাজিরাকে জানান, আমরা আতঙ্কে ঘুম থেকে উঠেছি, আমাদের সন্তানরা ভয় পেয়েছে। আত্মীয়দের ফোন আসতে থাকে, সবাই একে অপরের খোঁজ নিচ্ছিল। অ্যাম্বুলেন্স এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায় ছুটছিল। মানুষজন হাসপাতালের দিকে দৌড়াচ্ছিল, তাদের হাতে ছিল তাদের শিশুদের দেহাবশেষ।
আল জাজিরার রিপোর্টার তারেক আবু আজযুম জানান, ইসরায়েলি হামলা মূলত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অস্থায়ী বিদ্যালয় ও আশ্রয়স্থলগুলোর ওপর হয়েছে।
তিনি বলেন, গত এক ঘণ্টায় ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমানগুলোর স্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। হামলায় নিহতদের মধ্যে নবজাতক, শিশু, নারী ও বৃদ্ধরাও রয়েছেন।
যুদ্ধবিরতি আলোচনা অচলাবস্থায়
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী যেসব নৃশংস গণহত্যা চালাচ্ছে, তা প্রমাণ করে যে তারা কেবল হত্যাকাণ্ড, ধ্বংস ও গণহত্যার ভাষা বোঝে। তারা পরিকল্পিতভাবে শিশু ও নারীদের হত্যা অব্যাহত রেখেছে, যা প্রমাণ করে যে এই দখলদাররা রক্তপিপাসু।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা চলছিল, যেখানে প্রস্তাব ছিল প্রায় ৬০ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা। তবে ইসরায়েল চাইছিল, প্রথম ধাপটি এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাড়ানো হোক।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, যদি বন্দিরা মুক্তি না পায়, তবে গাজায় নরকের দরজা খুলে যাবে। আমরা যুদ্ধ বন্ধ করব না, যতক্ষণ না সব বন্দি মুক্ত হয় ও যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জিত হয়।
১৮ মাস ধরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজা
ইসরায়েলের ১৮ মাসের সামরিক অভিযানে গাজার বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে, ঘরবাড়ি, হাসপাতাল ও স্কুল বিধ্বস্ত হয়েছে। গাজার ৭০ শতাংশ স্থাপনা ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে।
ওএফ