প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ নিল সুদানের সেনাবাহিনী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ২০:১৫

সুদানের রাজধানী খার্তুমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তারা বিষয়টি জানিয়েছে। র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) বিরুদ্ধে দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে দেশকে বিভক্তির মুখে ঠেলে দিয়েছে আরএসএফ।
দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে ছিল। তবে সম্প্রতি তারা বেশ কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশটির মধ্যাঞ্চলে আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের কাছ থেকে কিছু এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে।
অন্যদিকে, আরএসএফ পশ্চিমাঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও সুসংহত করেছে। যার ফলে সংঘাত আরও বাড়তে পারে। দেশকে কার্যত বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে একটি সরকার গঠনের চেষ্টা করছে, যদিও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, তারা খার্তুমের কেন্দ্রস্থলের বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভবনেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সামরিক সূত্র জানিয়েছে, আরএসএফের যোদ্ধারা প্রায় ৪০০ মিটার দূরে সরে গেছে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে সংঘাতের সূচনা হলে আরএসএফ দ্রুত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ পুরো শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। তখন এই সংঘাতের মূল কারণ ছিল আধাসামরিক বাহিনীকে সেনাবাহিনীর সাথে একীভূত করা নিয়ে বিরোধ।
সেনাবাহিনী কিছু ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদের সৈন্যদের উল্লাস করতে দেখা গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, প্রাসাদের জানালাগুলো ভেঙে গেছে এবং দেয়ালগুলোর গায়ে গুলির চিহ্ন স্পষ্ট।
আরএসএফ এখনো সেনাবাহিনীর এই অগ্রগতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এর আগের দিন, আরএসএফ জানিয়েছিল যে তারা উত্তর দারফুরে সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখল করেছে।
সুদানের অনেক নাগরিক সেনাবাহিনীর এই বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
৫৫ বছর বয়সী খার্তুমের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর এই খবরটাই আমার কাছে সবচেয়ে আনন্দের। কারণ এটি খার্তুমের পুরো নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের সূচনা হতে পারে। আমরা আবার নিরাপদ জীবন চাই। ভয় ও ক্ষুধার বাইরে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চাই।
জাতিসংঘের মতে, এই সংঘাতের ফলে বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভিক্ষের ছায়া দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং ৫ কোটি মানুষের দেশে রোগব্যাধির প্রকোপও বেড়েছে।
উভয় পক্ষকেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আর আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও উঠেছে। তবে দুই পক্ষই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা সব যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছি, যতক্ষণ না সম্পূর্ণ বিজয় অর্জিত হয়। এই মিলিশিয়া ও তাদের সহযোগীদের হাত থেকে আমাদের দেশকে পুরোপুরি মুক্ত করব।
এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল দুই বছর আগে, যখন দেশটি গণতান্ত্রিক শাসনে উত্তরণের পরিকল্পনা করছিল।
২০১৯ সালে সুদানের দীর্ঘদিনের শাসক ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেনাবাহিনী ও আরএসএফ একজোট হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা বেসামরিক সরকারের বিরুদ্ধেও অভ্যুত্থান ঘটায়।
তবে দীর্ঘদিন ধরেই সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। কারণ ওমর আল-বশির সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ হিসেবে আরএসএফকে গড়ে তুলেছিলেন। আরএসএফের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহাম্মদ হামদান দাগালো। অন্যদিকে, সেনাবাহিনী পরিচালিত হচ্ছে সেনা কর্মকর্তা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে।
ওএফ