Logo

আন্তর্জাতিক

ভূমিকম্পে

তীব্র মানবিক সংকটে মিয়ানমার, নিহত ২৭০০ ছাড়াল

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:২০

তীব্র মানবিক সংকটে মিয়ানমার, নিহত ২৭০০ ছাড়াল

মিয়ানমারের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। দেশটির গৃহযুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত জনগণের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের সহায়তা সংস্থাগুলো আশ্রয়, খাদ্য ও পানির জরুরি প্রয়োজনের কথা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার এক টেলিভিশন ভাষণে মিয়ানমারের সামরিক শাসক মিন অং হ্লাইং জানান, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৭১৯ জনে পৌঁছেছে। তা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, ৪ হাজার ৫২১ জন আহত ও ৪৪১ জন নিখোঁজ রয়েছেন।  

শুক্রবার দুপুরের দিকে আঘাত হানা ৭.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পটি ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এতে প্রাচীন বৌদ্ধ প্যাগোডা থেকে শুরু করে আধুনিক ভবনও ধসে পড়েছে।  

এদিকে, প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ধসে পড়া একটি বহুতল ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিতদের সন্ধানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদিও সময় যত গড়াচ্ছে, আশা ততই ক্ষীণ হয়ে আসছে।  

মানবিক সংকট তীব্রতর হচ্ছে  
মিয়ানমারের মান্দালয় অঞ্চলে একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় ধসে ৫০ জন শিশু ও দুইজন শিক্ষক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয় কার্যালয় (ইউএনওসিএইচএ)।  

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানুষ মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে লড়াই করছে, যেমন নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পাওয়া। অন্যদিকে জরুরি উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের সন্ধানে ও জীবন রক্ষাকারী সহায়তা দিতে নিরলসভাবে কাজ করছেন।

আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটি (আইআরসি) জানিয়েছে, মান্দালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়, খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সহায়তার বেশি প্রয়োজন।

মান্দালয় থেকে আইআরসির এক কর্মী জানান, ভূমিকম্পের ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠার পরও মানুষ এখনো আফটারশক আতঙ্কে রয়েছেন। রাস্তায় কিংবা খোলা জায়গায় তারা রাত কাটাচ্ছেন।  

গৃহযুদ্ধের বাধা
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে আহত ও গৃহহীনদের কাছে সহায়তা পৌঁছানো জটিল হয়ে উঠেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সামরিক সরকারকে অবশ্যই দেশটির এমন সব অঞ্চলে সাহায্য পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে, যেগুলো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো দাবি করেছে যে, ভূমিকম্পের পরও জান্তা বাহিনী বিমান হামলা চালিয়েছে।

অ্যামনেস্টির মিয়ানমার গবেষক জো ফ্রিম্যান বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী গোষ্ঠী-নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। তাদের অবশ্যই সব মানবিক সংস্থার জন্য বাধাহীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে হবে।

ভূমিকম্পে সড়ক, সেতু ও অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংস হওয়ায় এবং জান্তার কঠোর যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণের কারণে উদ্ধার ও সহায়তা কার্যক্রম আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।  

থাইল্যান্ড জানিয়েছে, ব্যাংককে এই সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য আঞ্চলিক নেতাদের বৈঠক পূর্বনির্ধারিত সময়েই হবে। যদিও মিন অং হ্লাইং ভার্চুয়ালি অংশ নিতে পারেন। ভূমিকম্পের আগে তিনি ৩-৪ এপ্রিলের এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ব্যাংকক সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন।

ব্যাংককের ভবন ধসের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত  

ব্যাংককে একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ার পর উদ্ধারকর্মীরা জীবিতদের সন্ধানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ভূমিকম্পের চার দিন পার হয়ে যাওয়ায় তাদের আশা ফিকে হয়ে আসছে।  

উদ্ধার অভিযানের স্বেচ্ছাসেবী নেতা বিন বুনলুয়েরিট বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রায় ৭০টি মরদেহ রয়েছে। আমরা আশা করছি কোনো অলৌকিকভাবে এক-দুইজন এখনো বেঁচে থাকতে পারেন।  

ব্যাংককের ডেপুটি গভর্নর তাভিদা কামোলভেজ জানান, স্ক্যানারে ছয়টি মানব আকৃতির অবয়ব শনাক্ত করা হয়েছে, তবে সেখানে কোনো নড়াচড়া বা প্রাণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা নিরাপদভাবে তাদের কাছে পৌঁছানোর উপায় খুঁজছেন।  

পরিবার ও বন্ধুরা নিখোঁজদের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। ১৯ বছর বয়সী আর্তিথাপ লালোদ তার ভাইয়ের খোঁজে করছিলেন। তিনি বলেন, উদ্ধারকারী দল তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমরা তা দেখছি। যা ঘটবে, তা মেনে নিতেই হবে।  

এই ভবন ধসে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে এবং ৭৪ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পে নিহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ জনে।  

সরকারি তদন্তে দেখা গেছে, ধসে পড়া ভবনটির কিছু স্টিলের নমুনা নিম্নমানের ছিল। থাইল্যান্ডের শিল্প মন্ত্রণালয় এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর