Logo

আন্তর্জাতিক

গাজার শুজাইয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৫

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৫

গাজার শুজাইয়ায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩৫

গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়। বুধবার চালানো এ হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এখনো বহু মানুষ আহত ও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।

এটি সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলাগুলোর একটি, যেখানে একাধিক বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।

উদ্ধারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, ধ্বংস হওয়া অন্তত ১০টি ভবনের নিচে অনেক মানুষ চাপা পড়ে আছেন। হাসপাতাল ও চিকিৎসাকর্মীরা আহতদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বুধবার গাজার অন্যান্য এলাকাও—যেমন রাফা, খান ইউনুস, দেইর আল-বালাহ ও বেইত হানুনে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত ছিল।

ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানায়, এসব হামলায় নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

এক নারী যিনি তার ছেলেকে হারিয়েছেন, তিনি বলেন, আমার হৃদয়টা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে… মনে হচ্ছে বড় কিছু একটা একেবারে উপড়ে গেছে। নতুন এক ক্ষত তৈরি হয়েছে।

তিনি মিডল ইস্ট আইকে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলেন। এ সময় পুরোনো দিনের কথাও মনে করেন— যখন তার স্বামী, বোন ও ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল।

তিনি আর্তনাদ করছিলেন, “আল্লাহ আরব দেশগুলোকে অভিশাপ দিন, আল্লাহই যথেষ্ট, আল্লাহ ইসরায়েলকে অভিশাপ দিন।

মাই আবু শাওয়িশ তার স্বামী সামীর সালমান আবু শাওয়িশকে হারিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি তাঁবুর ভেতরে বসে ছিলেন। তখনই খান ইউনুসে ইসরায়েল হামলা চালায়।

চার সন্তানের এই জননী বলেন, আমরা উদ্বাস্তু। এটা নিপীড়ন। যা ঘটছে তা সম্পূর্ণ অবিচার। ধৈর্য আর মানসিক শক্তির উপর ভর করেই এখনো টিকে আছি। আমরা চাই এই যুদ্ধ থেমে যাক, যথেষ্ট হয়েছে।

তার ১৬ বছর বয়সী মেয়ে ইদুলু আবু শাওয়িশ জানায়, তারা তখন রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তার মা একটি মেসেজ পান, যেখানে লেখা ছিল: ‘তোমার স্বামী শহীদ হয়েছেন।’

তিনি বলেন, লোকজন আমাদের চারপাশে ভিড় করেছিল, আর সবাই বলছিল—তোমার বাবা শহীদ হয়েছেন।

গত মাসে গাজায় পুনরায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি সেনারা প্রায় ১৫শ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, আর ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮০০-র বেশি।

গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান বাহিনী একটানা গাজা ভূখণ্ডে বোমা বর্ষণ ও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েলি প্রাক্তন সেনাদের সংগঠন ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সে দেওয়া সাম্প্রতিক সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, সেনারা মরদেহ খোঁজা ও বিস্তীর্ণ এলাকা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ পেয়েছিল।

সংগঠনটির ‘দ্য পেরিমিটার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা গাজার ভেতরে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি বাফার জোন তৈরি করেছে। যার প্রস্থ ৮০০ থেকে ১৫০০ মিটার। যেখানে ভূমির বড় অংশ ‘মৃত্যু উপত্যকা’তে পরিণত করা হয়েছে।

বাফার জোন তৈরি করতে সেনাদের কৃষিজমি ধ্বংস করা, আবাসিক এলাকা গুঁড়িয়ে ফেলা ও যেকোনো ব্যক্তি কাছাকাছি এলেই গুলি চালানোর নির্দেশ ছিল।

ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজ বুধবার জানায়, সেনাবাহিনী রাফা শহরকে বাফার জোনে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করছে। যা গাজার দক্ষিণের একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর।

সেনারা ইতোমধ্যে রাফার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। তারা নির্বিচারে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে। এমনকি চিকিৎসাকর্মীও রেহাই পাচ্ছে না। আর হাজারো মানুষকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।

এ মাসের শুরুতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘মোরাগ করিডোর’ দখলের ঘোষণা দেন—এটি খান ইউনুস ও রাফার মধ্যবর্তী একটি অঞ্চল, যা গাজার পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত। 

 

মিডলইস্টআই/ওএফ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর