ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা চীনের, ভারতের প্রতিক্রিয়া
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:৪০
ছবি : সংগৃহীত
গত সপ্তাহে চীন ঘোষণা করেছে যে, তারা তিব্বতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ তৈরি করবে। যা থ্রি গর্জেস বাঁধের থেকেও তিনগুণ বড় হবে। যেহেতু, পৃথিবীর ঘূর্ণন ০.০৬ সেকেন্ড ধীর করে দেওয়া এই বাঁধটি চীনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে নির্মিত হয়েছে, তাই নতুন বাঁধটি তিব্বতের পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল হিমালয় অঞ্চলে ভারতের সীমান্তের খুব কাছে নির্মিত হবে।
পরিবেশের উপর প্রভাব ছাড়াও, অঞ্চলটি ভূতাত্ত্বিকভাবেও ভঙ্গুর। কারণ এটি একটি উচ্চ সিসমিক অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে তুলনামূলকভাবে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ, যা চীন তিব্বতে ‘ইয়ারলুং সাংপো’ নামে পরিচিত, সেখানে এই বাঁধ নির্মাণের কারণে পরিবেশগত প্রভাবসহ অন্যান্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। চীন পরিকল্পিত এই বৃহৎ প্রকল্প নিয়ে এই দুটি বিষয়েই ভারতের উদ্বেগ রয়েছে।
মেগা প্রকল্প সম্পর্কে বেইজিংয়ের ঘোষণার কয়েকদিন পরে, শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) নয়াদিল্লি প্রতিক্রিয়া জানায় যে, ভারত ‘তার স্বার্থ রক্ষা করবে।’
ভারত চীনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, নদীর পানির ওপর তাদের অধিকার রয়েছে। পাশাপাশি চীনকে তাদের পরিকল্পনা নিয়ে স্বচ্ছতা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছে তারা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত সর্বশেষ ঘটনাবলীর উপর মনিটরিং চালিয়ে যাবে এবং প্রয়োজন হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘আমরা নজরদারি অব্যাহত রাখব এবং আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
প্রকল্পটি ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহের পাশাপাশি নদী অববাহিকার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটির ফলে প্রচণ্ড খরা ও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিতে পারে। যা ভারতের নদীর তীরে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করবে।
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, উজানের তৎপরতায় ব্রহ্মপুত্রের ভাটির রাজ্যগুলোর স্বার্থ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে বেইজিংকে অনুরোধ করা হয়েছে।
অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের উপর প্রকল্পগুলোর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে জয়সওয়াল বলেন, ‘নদীর জলের উপর প্রতিষ্ঠিত ব্যবহারকারীর অধিকারসহ একটি নিম্ন অববাহিকার রাজ্য হিসাবে, আমরা বিশেষজ্ঞ-স্তরের পাশাপাশি কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অঞ্চলের নদীগুলোর উপর করা মেগা প্রকল্পগুলোর বিষয়ে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের মতামত এবং উদ্বেগ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভাটির দেশগুলোর সঙ্গে স্বচ্ছতা ও পরামর্শের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি এসব বিষয় পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।’
এছাড়া, এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। প্রকল্পটি ভারত ও চীনের মধ্যে তীব্র ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। এ প্রকল্প এই দুই দেশের মধ্যে জলযুদ্ধের বীজ বপন করতে পারে। এর আগে ২০২২ সালে এ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন, ভূ-রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক কৌশল উপদেষ্টা জেনেভিভ ডোনেলন-মে।
প্রকল্পটি সম্পর্কে আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি
নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এটি তিব্বতের পূর্ব প্রান্তে, ইয়ারলুং সাংপো (ব্রহ্মপুত্র) নদীর নিম্ন স্রোতে নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অংশ। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প হবে।
বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নির্মিত হতে চলা এই নতুন বাঁধটি, মধ্য চীনে অবস্থিত বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম থ্রি গর্জেস বাঁধের ৮৮.২ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘন্টা ক্ষমতার চেয়ে তিনগুণেরও বেশি হবে।
থ্রি গর্জেস বাঁধ নির্মাণের সময়, চীনকে প্রকল্পের কারণে বাস্তুচ্যুত ১৪ লাখেরও বেশি মানুষকে পুনর্বাসন করতে হয়েছিল। আকারে তিনগুণ বড় নতুন এই প্রকল্পটির কাজ শুরু হলে কত মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে তার কোনো হিসাব দেয়নি বেইজিং।
এই প্রকল্পটি শুধু তিব্বত এবং ভারতের পরিবেশকে পরিবর্তন করবে না। বরং এটি নদীর স্রোতকেও পরিবর্তিত করবে। যার ফলে ভারতের কৃষি ব্যবস্থা এবং অন্যান্য ভূ-অর্থনৈতিক দিকেও ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
এসবি